ব্রেক-আপ


 

ব্রেক-আপ
- Dip Saha Chowdhry(রোদ্দুর)

 

 
ব্রেক-আপ শব্দটা শুনলে সত্যিই মানুষের মধ্যে সবসময় এক মিশ্র অনুভূতি খেলে যায়। এরপর আমার কি হবে বা এরপর আমি কী করবো? এমন কিছু প্রশ্ন এক মুহূর্তে যেন মনের মধ্যে এভারেস্টের চূড়া তৈরী করে। যাক! আজ অন্য একটা ব্রেক-আপের গল্প বলবো। একটু অন্যরকম – আলাদা। প্রায় একবছর পর কলমটা ধরছি। আর ফিরিয়ে নিয়ে আসছি আমার খুব কাছের দুই চরিত্র – রাগিণী – ইমন এর জুটিকে। তো চলুন দেখা যাক সেই গ্র্যন্ড এন্ট্রিকে। তার আগে সবাইকে আমি – ইমনের পক্ষ থেকে Happy New Year 2020.
রাগিনীর সাথে ব্রেক-আপ হয়েছে ১৫ দিন হলো। এতোদিনের জন্য দূরে থাকার ঘটনা আগে কখনো হয়নি। আগে যা হতো তা ১২ ঘন্টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অভিমানের এজলাসে বিচার হয়ে যেতো আর প্রতিবারই আমি দোষী নির্বাচিত হতাম। কিন্তু এবারের ঝামেলার কারণটা ঠিক আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। যাই হোক গল্পে ফেরা যাক। শহর কলকাতা শীতকে তখন বিদায় দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। দূরে ময়দানের ঐপাশে দিগন্তের খুব কাছ ঘেঁসে এক একফালি চাঁদ ঝলমল করছে। ফরচুন ভ্যালির একটা অ্যাপার্টমেন্টের জানলায় দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছি। ওপারে সম্বিত – সন্দীপ্তা, ঋজু কনফারেন্সে। ঠিক তখনই ফ্ল্যাটের একস্টেনশন ফোনটা বেজে উঠলো। ওদের ফোনটা হাতে রেখেই রিসিভারটা তুলে নিলাম। ওপার থেকে সিকউরিটি ডিপার্টমেন্ট থেকে একটি ছেলে বললো “ইমন-দা একটা মেয়ে এসেছে” তখন ঘরের হোম থিয়াটারে গান বাজছে, “Jab bhi koi ladki dekhu, mera dil deewana bole
Ole ole ole, ole ole ole”. সেটা কানে আসতেই মুখে একটা হাসি খেলে গেলো। গদগদ গলায় বললাম, “কে এসেছে?” বললো, একজন নাম বললেন ‘রাগিণী’। সঙ্গে সঙ্গে মাথাটা গরম হয়ে গেলো। বললাম “বলো আমি নেই।”
সে বললো, “স্যার পাশেই দাঁড়িয়ে আপনার সব কথা শুনলো, কি বলবো স্যার?” কি আহাম্মকের পাল্লায় পড়লাম ভগবান!! বললাম “আচ্ছা বাবুরাম, তুমি কি পাশে ফায়ার ব্রিগেড রেখে ঘরে আগুন লাগাও??” সে বললো “বুঝলাম না স্যার।” হঠাত পাশ থেকে রাগিণীর আওয়াজ শুনতে পেলাম, “এই নেমে আয় শালা। নাম বলছি!!!”। হকচকিয়ে গেলাম। বললাম , “কি হলো এটা?” গার্ড বললো, “স্যার , মনে হয় খেয়ে এসেছে। ” সর্বনাশ!! ফোনটা কোনো মতে রেখে। কনফারেন্সে থাকা বন্ধুদের বললাম, “ভাই খুব বিপদ ।” সবাই বললো- কি হয়েছে?? বললাম “সীতা এসেছে লঙ্কা জয় করতে”। সম্বিত বললো “সীতায়ন!!” আমি বললাম “ফাক অফ!!”
কোনমতে বেড়িয়ে এলাম, লিফটের কাছে এসে দেখলাম সেটা কাজ করছে না। এক লাথি মেরে সিঁড়ি দিয়ে হনহন করে নেমে আসতেই জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময়ের একটা চোখের সামনে দেখতে পেলাম। অবশ্য কল্পনা করিনি এমন নয়। দেখলাম একগুচ্ছ লোক দাঁড়িয়ে আছে। আমার পাশে থাকা একটা লোক বললো, “কিছু হয়েছে?” আমি বললাম, “না হবে!” উনি হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে রইলেন। সামনে ভিড় সরিয়ে দেখলাম রাগিণী ভিড়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে একটাই কথা বলছে “শালা নেমে আয়...” আমাকে দেখতে পেয়েই, “এই তো আয়… আয়… ” একজন বলল, “আপনি ওকে চেনেন!” মুখটা হাত দিয়ে ঢেকে বললাম “Unluckily, Yes!!”
সামনে এগিয়ে আসতেই দেখলাম ও হাত দুটো উঁচু করে ডাকছে। “এই যে আমার বাবু।” বিশ্বাস করুন আমার এক মুহুর্তের মধ্যে মনে হচ্ছিলো যদি আমি ওকে না চিনতাম খুব খুশি হতাম। অন্তত এই মানুষের ভিড়ে মাথা তো কাঁটা যেতো না। আমি বললাম “এখানে সিনক্রিয়েট করিস না। ভিতরে চল”। ও বললো, “আমি তো হাঁটতেই পারি না। আমি তো উড়ি… হুউউশ……!” বুঝলাম নেশাটা একটু বেশিই হয়েছে। কোনোরকম পাঁজাকোলা করে নিয়ে সিঁড়ির সামনে এসে দাঁড়ালাম। ততক্ষণে লিফটটাও সোজা নিচে নেমে এসেছে। লিফটে উঠতেই কানে কিছু ফিসফিস শব্দ এলো, “এভাবে হয় নাকি… যাকে তাকে… সোসাইটির একটা সম্মান…” মুখের উপর লিফটের দরজাটা বন্ধ হয়ে গেলো। আস্তে আস্তে নিচের জমায়েতের কোলাহলটাও থমকে এলো। লিফটের ঝাঁকুনিতে রাগিণী আমার বুকের বোতামের নিচটা খামচে ধরলো। ভয় পেলে এটা ওর পুরানো স্বভাব। নিজের মুখটা বুকের খুব কাছে নিয়ে এলো। ফ্লোরের সামনে দরজাটা খুলতেই দেখলাম ঘরের দরজাটা খোলা… ঘরের থেকে যথেষ্ট জোরে হোম থিয়েটারের আওয়াজটা আসছে। ভাগ্যিস সামনের ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা ছুটিতে আছে। নইলে এতক্ষণে এখানেও একটা হুলস্থূল হতো। ওকে ঐ পাঁজাকোলা অবস্থাতেই নিয়ে ঘরে ঢুকলাম। কুনুইয়ের সাহায্যে হালকা টোকা দিতেই দরজাটা বন্ধ হয়ে গেলো। অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ্য করলাম বুকের বাঁদিকে জামাটা ভিজছে আসতে আসতে। আসলে রাগিণী কাঁদছে আর ওর চোখটা ঠিক আমার বুকের বাঁদিকে। আস্তে আস্তে ওকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে মিউজিক সিস্টেমটা অফ করলাম। দেখলাম ওয়াইনের ছাপ জামা প্যান্ট সব জায়গাতেই আছে। জামা প্যান্ট যথারীতি ভেজা। এবার ভেজা জামা কাপরে ঠাণ্ডা লাগতে পারে। ওর আবার ঠাণ্ডার ধাঁচ আছে। রিপ জিন্সটা টেনে নামাতে গিয়ে সামান্য ক্যাঁচ করে শব্দ হলো। রিপের জায়গাটা ছিঁড়েছে হালকা। এটা ওর খুব পছন্দের জিনস। এইবার আমায় হয়তো মেরেই ফেলবে। জিনস আর শার্টটা খুলতেই দেখলাম জায়গায় জায়গায় পোড়া দাগ। কব্জির কাছে, গোড়ালির কাছে খামচির দাগ। একটু কাছে গিয়ে দেখতেই বুঝলাম পোড়া দাগগুলি সিগারেটের । এ-কয়দিন রাগের চোটে নিজেকে যথারীতি পাশবিক অত্যাচার করেছে। সিগারেটের ছ্যাঁকা থেকে শুরু করে মাংস খুবলে নেওয়ার মতো অত্যাচার নিজের উপর করেছে। এর হিসেব আমি পরে নেবো। ঘা গুলো এখনো শুকায়নি। তুলোয় করে একটু ব্রেটাডিন এবং সুপ্রাজেন্ট এনে ঘাগুলোতে লাগাতে লাগলাম। আর ও অবচেতন অবস্থাতেই মুখে আহ! এর মতো একটা আওয়াজ করে বালিশের কোনাটা খামচে ধরলো। আমি একটু হালকা হেসে মাথা নাড়ালাম। তারপর সারা গায়ে চাদরদিয়ে ঢেকে এসিটা অল্প করে চালিয়ে দিলাম।
সিগারেটের প্যাকেটটা আর লাইটারটা হাতে নিয়ে, বারান্দায় এলাম। নিচে তাকিয়ে দেখলাম কিছু একটা আলোচনা হচ্ছে। সিগারেটের বক্সের ক্যাপ খুলতেই দেখলাম সেটা ফাঁকা। ভুলেই গেছিলাম সিগারেট শেষ। হাতে লাইটারটা নিয়েই লিফটের দিকে দৌড়ালাম। সেই আবার লিফট আউট অফ সার্ভিস। মানে আবার একটা গণ্ডগোল হবে। এই লিফটের সাথে আমার একটা মিল আছে। এটা যখন বন্ধ হয় ঠিক তখন আমার কোনো-না-কোনো Bad Luck শুরু হয়। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতেই বয়স্করা চেপে ধরলো। “দ্যাখো ভায়া, এসব ঠিক না। তোমাকে তো সজ্জন বলেই জানতাম।” মনে মনে ভাবলাম “কি জানি বাবা , আমি কি কোনোদিন ওনার মেয়েকে কামড়ে দিয়েছি নাকি। যদিও ওনার মেয়েকে কামড়ালে আমার দাঁত আর থাকবে কি না জানি না। ” উনি বলে চললেন, “একটা মেয়েকে তুমি ঘরে নিয়ে যাবে। আরে চোখ লজ্জা বলে তো কিছু আছে না-কি? যেকোনো কাউকে উপরে নিয়ে গেলে চলবে কি করে।” আমি কথায় কান না দিয়ে সিগারেটটা নিয়ে এলাম। আসার মুখে আবার উনি… “আমাদের কথা কি কানে যাচ্ছে না? বাড়িটাকে কি পরকীয়ার আশ্রয় বানাবে নাকি। ” এবার আমি ঘুরে দাঁড়ালাম। “কাকু আপনি যাকে যে সে বলছেন সে আমার আইনত স্ত্রী। আমাদের রেজিস্ট্রি হয়ে গেছে ৪ মাস আগে। আপনাদের ম্যানেজিং কমিটির গ্রুপে ছবিটা তুলে পাঠিয়ে দেব। উকিলকে ডেকে দেখিয়ে নেবেন। আর পরকীয়ার কথাই যখন বললেন। তাহলে কার কার মধ্যে পরকীয়া চলছে তার ছবিও গ্রুপে দিয়ে দেবো। ” একথা বলে ৩ তলার জানালার দিকে তাকালাম। এক মহিলার মুখ লুকিয়ে নিলো। ঐ কাকুরও মুখ কালো হয়ে গেলো। কারণ আসলে ওনার আর ওনার চলছে আরকি। বলে সটাং করে উপরে চলে এলাম। আগের মতোই ঘুমাচ্ছে। চুলটা আস্তে করে সরিয়ে কানের পিছনে নিয়ে দিলাম। সত্যিই কি সুন্দর লাগে ও ঘুমালে। কপালে একটা চুমু দিলাম।
পরেরদিন পুর্বদিকের জানালায় বসে কফিটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। ধোঁয়াটা কাঁচের ভেজা ছাপ ফেলেছে। কফিটা চুমুক দিতেই পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। সরি…!!। আমি ভারি গলায় বললাম “ইটস! ওকে!” ও আমার পা খামচে ধরলো। ঘারে কামরে ধরলো। ঠোঁটে ঠোঁট রাখতে যাবো এমন সময় ডিং-ডং! কলিংবেল। ওপারে দাঁড়িয়ে সন্দীপা । হ্যলো! মিঃ গ্রে। চল ঘুরে আসি। সবাই আসবে। ঘরে ঢুকতেই দেখলো রাগিণী দাঁড়িয়ে , আমার একটা লম্বা জামা পরা, নিচে কিছু নেই। এক জোর সিটি বাজিয়ে বলল “ওহ ইয়াহ!”। ব্লাশ করতে করতে ঘরে চলে গেলো ও।
সবাই রেডি হয়ে লিফটের সামনে দাঁড়ালাম। পাশ থেকে একজন বলল, “লিফট! আউট অফ সার্ভিস!” আমি চোখ বড়বড় করে বললাম, “নট এগেইন!!”

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

ফিউসবক্স (Sequel of কলেজস্ট্রিট)

“ওম”

♥ ♥ ব্যারিকেড ♥ ♥