শারণ্যা





শারণ্যা
- রোদ্দুর


 -- এবারের পূজোটা ঠিক কেমন জানো আলাদা না?

কফিহাউসে কফিতে চুমুক দিতে দিতে বলে রিমন।
-- তা ঠিক! ধুর মুখ গুলো সব ঢাকা মাস্কে। কাউকে চেনাই যায় না।
তবে ভাই এই ভাইরাসের বাজারে মুখ না দেখানোই ভালো। জয় মা।
-- ধুর আমার দ্বারা প্রেমটা মনে হয় আর হবে না।
-- প্রেম ছেড়ে দে ভাই। প্রেম করলেই বা* করোনা চুমু দিয়ে দেবে। তারপর পটকে গেলে স্বর্গে ঊর্বশি, মেনোকা এরাও পাত্তা দেবে না।
-- পাত্তা পেয়ে কি হবে। আমি তো আবার শিব-শংকর। বৈরাগী স্বভাবটা কোনো দিনই যাবে না।
-- তা ঠিকই। ঠিক।
হঠাৎ পাশ দিয়ে চলে যায় সুন্দর পার্ফিউম মাখা একটা অবয়ব। গন্ধে মোহিত হয়ে ওঠে রিমন। কেমন যেন নেশা লাগানো গন্ধটা। গন্ধটা কাটতে কাটতেই হাতে একটা টান লাগে রিমনের। কি ব্যাপার। মেয়েটার আঁচলটা আটকে গেছে তার হাতের একটা বেসলেট এ থাকা রুদ্রাক্ষতে।
--- সরি সরি। আসলে বুঝতে পারিনি।
আঁচলটা ছাড়িয়ে নেয় মেয়েটি। কিন্তু ততক্ষণে মেয়েটার চোখে আটকে গেছে রিমন। চোখ দুটো যেন কথা বলে।
-- কি রে। শারণ্যা! আয়।
ডেকে ওঠে তার বান্ধবীরা।

ততক্ষণে রোহিত রিমনকে বলছে-
-- ও আমার ভোলানাথ। এবার তুমি ঘোর থেকে বেরিয়ে এসো। তুমি জানো না তুমি বৈরাগী।
--- তুই শুনিস নি? মেয়েটার নামটা?
--- কি?
--- শারণ্যা, দেবী দূর্গার আরেক নাম। যে ভোলেনাথ এর বৈরাগ্য ঘুঁচিয়েছিল। আমারও হয়ে গেলো।


(2)

সিরিয়াসলি?

রোদ্দুর


কিছু গল্প শুরু হয় অজান্তেই। হঠাত কোনো দমকা হাওয়াতেই। শত মানুষের ভিড়ের মাঝে। সেই গল্পগুলোর প্রচ্ছদেই লেখা থাকে, “শর্তাবালি প্রযোজ্য নয়”

- এই বইটা ভালো হবে না? আরে এটা তো সেই বইটা যেটা অস্মিতা পড়তে বলেছিলো।

- কি জানি , আমার আবার ওসব বইয়ের শখ নেই। তুই ভালো বুঝবি।

- হ্যাঁ , তুই তো আবার ছেলেদের ব্যাপারটা ভালো বুঝিস। কার কি ভাবসাব।

- তা ঠিক! যেমন ধর দেবী শারন্যা , আপনাকে একজন অনেকক্ষন ধরে স্টক করছে।

- হুম দেখেছি। আরে ওর বেসলেটেই তো আমার শাড়িটা আটকে গেছিলো।

- ওহ! হ্যাঁ , হাউ রোম্যান্টিক।

- ছাড়তো, আর রোম্যান্টিক। গুলি মার। সবাইকে চেনা আছে আমার। ওই একদিন - দুদিন। তারপর সবাই এক।

- হ্যাঁ , সেই। 

বইটা কিনে, টাকাটা দিয়ে, দে’জ পাবলিকেশনের স্টলের দিকে হাঁটা দেয় শারন্যা আর সম্পুর্ণা। সেখানে এতো ভিড় দেখেই মনটা ছ্যাঁত করে ওঠে দুজনার। মহামারি এবার আর কেউ ঠেঁকিয়ে রাখতে পারবে না। এতো ভিড়। মাস্কটা মুখের সাথে আঁটসাঁটো করে বেঁধে নেয় শারন্যা। 

- মেরেই ফেলবে গো। বাঁচিয়ে রাখবে না গো। মহাদেব গো দেখো বাবা!

- এখানে মহাদেবও আক্রান্ত বুঝলি?

- হ্যাঁ, সেই আরকি।

হঠাত পাশ থেকে এক অর্ধচেনা গলা।

- সরুন তো। এই করোনাতে আমাদের মারবেন নাকি। দেখছেন না , দেবী দুর্গা আর তার সহেলি আটকে গেছেন। মায়া হয় না বুঝি। 

এতোটাই জোরে বলেছে যে দোকানদার পর্যন্ত মুখ উঁচু করে দেবী দূর্গাকে খুঁজতে লাগলেন। সবার নজর তখন শারন্যার দিকে। ছেলেটার দিকে চোখ পাঁকিয়ে ওঠে সে। 

- আয় হ্যাঁয়। উফফফ… মার ডালা…!! 

- এই কি শুরু করেছেন বলুন তো। অনেকক্ষণ ধরে দেখছি। ফলো করছেন। কি মতলব কি আপনার। 

- হ্যাঁ, ফলো। ফলোই বটে। যুগ-যুগান্তর ধরে করে আসছি। 

- এক্সিউজ মি! বুঝলাম না।

- ও কিছু না। আচ্ছা আপনি এখানে কি কিনতে এসেছিলেন। কিনবেন না?

- আমার জিনিস, আমি কিনবো। ডোন্ট বদার প্লিজ।

- এই দেখলেন তো, অভিমান। 

- আবার! আবোল-তাবোল বকছেন।

- বকার আর সুযোগ পাচ্ছি কই? আপনার ওই সুন্দর চোখে হারিয়ে যাচ্ছি।

- দেখুন আমার চোখ সুন্দর , আই নো। আপনি প্রথম না যে এটা বলছেন। আচ্ছা আপনার খেয়ে দেয়ে কাজ নেই? যান না । অন্য কাজে যান। এখানে সুবিধা করতে পারবেন না।

হাসতে থাকে ছেলেটি। মাস্কের উপর থেকে মুখের পেশি গুলি ভাঁজের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেয় তার হাসির ইঙ্গিত। 

- অদ্ভুত তো ! হাসছেন কেন? এতো অপমান করছি তাও?

- না আমার মানের গর্ব আছে। না অপমানের ভয়। আর যদি আরো বলি, আপনার কাছে নিজেকে সঁপে দিয়েছি , অপমান করলে করবেন। নাহলে করবেন না।

- এক্সিউজ মিঃ… আপনি কিন্তু…

- রোদ্দুর!

- হ্যাঁ, রোদ্দুর, নাম আমার! রোদ্দুর চৌধুরী। ৯৯………২ এটা আমার নাম্বার।

- আমি কি করবো। 

- মনে রাখবেন। দেবী দূর্গা তবে আসি।

- আমার নাম দুর্গা নয়।

- আপনার নামের মানে তাই।

- আপনি নাম জানলেন কি করে।

- আমি অন্তর্যামি , ব্যোমভোলে।

- এই দেখুন , উনি আমার পরম আরাধ্য , ইয়ার্কি করবেন না।

- হ্যাঁ, সেই! রোজ তো দেখি , পুজো করেন আমার , তাই প্রকট হলাম।

- আবার! 

- আচ্ছা , আচ্ছা কাটি ! আবার দেখা হবে।

- ওই আশাতেই থাকুন। 

- আমি ভবিষ্যৎ দেখি , বুঝলেন। টা …টা…।

হুড়মুড় করে বেরিয়ে যায় ছেলেটি। আকাশে তখন শরতের পেঁজা তুলোর মতো, মেঘের ভেলা ভেসে বেড়াচ্ছে। সেই দিকে তাকিয়ে থাকে শারন্যা। সম্পূর্ণা এতক্ষণ কিচ্ছু বলেনি। এবার মুখ খুললো,

- শালা , যাওয়ার আগে আমার ডায়লগটা দিয়ে গেলো। “দেবী দূর্গা।।!”

- (মুচকি হেসে শারন্যা বলে ) – ৯৯..

- (সম্পূর্ণা ভ্রু উঁচিয়ে বলে) সিরিয়াসলি?

- জানি না…


Comments

Popular posts from this blog

ফিউসবক্স (Sequel of কলেজস্ট্রিট)

“ওম”

♥ ♥ ব্যারিকেড ♥ ♥