৩১ শে মার্চ



 
৩১ শে মার্চ
- Dip Saha Chowdhury (#রোদ্দুর) 

৩ বছর পর দেশে ফিরছে সৃজন। শুধু কি দেশে ?? তার শহরে. . চেনা শহর কলকাতায়। এ শহরকে সে খুব মিস করেছে বিদেশে থাকাকালিন। সৃজন, সৃজন দত্ত । কলকাতার বড়বাজারে জন্ম, বেড়ে ওঠা, সবকিছুই এই এলাকাকে ঘিরে। বাবা সন্ময় দত্ত বড়োবাজারের এক ওষুধের দোকানের মালিক। কলকাতা শহরে জন্মেও সৃজন আর কয়েকজন ছেলেদের থেকে আলাদা। তথাকথিত আধুনিকতা তাকে ততোটা প্রভাবিত করেনি। ছোটোবেলা থেকে পড়াশুনা আর গীটার এই তার শখ। যাদবপুর থেকে পড়া শেষ করে MBA করতে সে পাড়ি দেয় সেই লন্ডন। তারপর আজ সে ফিরছে। বিমানবন্দর থেকে বেড়িয়ে বাড়ির কাউকে না দেখে অবাক হয়নি সে কারন কেউ জানেই না সে আসছে। বাবাকে সারপ্রাইজ দেবে বলে সে কাউকে জানায় নি। গেটে দাঁড়িয়ে একটা ট্যাক্সিকে যেতে দেখে সে ডাক দিলো
ও ভাই যাবে?? বড়োবাজার?
হাঁ সাব যাব।
চলো!
ট্যাক্সিতে উঠেই তার মনে এক আনন্দ উঁকি মারতে লাগলো। কতদিন সে তার বন্ধুদের দেখে নি। আজ সবাই মিলে বিকালে গল্প করবে। আকাশ এখন কি করছে কে জানে?? শেষ কথা হয়েছিলো ৯ মাস আগে ফেসবুকে। তারপর আর দেখা যায়নি ওকে। বুম্বা বলেছিল যে ও বাবার ব্যাবসা সামলাচ্ছে। নিধি এখন CSC দিচ্ছে। কত মজা হবে সবার সাথে আবার। আবার সবাই মিলে ঘুরতে যাবে। ভিক্টোরিয়ার সামনে আড্ডা দেবে। কে জানে বাড়ির সামনে ওই ঝালমুড়ির দাদুটা বসে নাকি। ওই ঝালমুড়ির স্বাদ যেন সে এই গাড়িতেই পাচ্ছে। সে বাবার জন্য একটা কোট এনেছে আর মায়ের জন্য একটা হাইনেক সোয়েটার। কে জানে হয়তো তাদের পছন্দ হবে।
যখন চমক ভাঙল। গাড়িটা জ্যামে আটকেছে। জানলা দিয়ে দেখল গিরিশ পার্ক। হ্যাঁ এই কলকাতার ঐতিহ্য। জ্যাম। এই না হলে কলকাতা মনে হয়?? গাড়ির রেডিওতে একটা গান বাজছে “জিন্দেগি. . ক্যায়সি হ্যা প্যাহেলি হায়. .”। ঘড়িতে তখন ১২-৩৯। হঠাৎ! এক জোর শব্দ. .!! আর সব শেষ...।

দিনটা ছিল ৩১ মার্চ, ২০১৬ । গণেশ টকিজের কাছে যে বিবেকানন্দ সেতু ভেঙ্গে পড়েছিল তাতে আটকে পড়া এক ট্যাক্সিতে ছিল সৃজন। বাড়ি ফেরা তার আর হয়নি। স্বপ্নগুলো সে দেখেছিলো ঠিকই কিন্তু সেগুলো বাস্তবের ক্যানভাস পায়নি, পেয়েছিল সিমেন্টের চাঁদর। ......
সত্যি গানটা কতটা বাস্তব “জিন্দেগি. . ক্যায়সি হ্যা প্যাহেলি হায়. . কাভি হাঁসায়ে... কাভি ইয়ে রুলায়ে হায় . . .।”

Comments

Popular posts from this blog

ফিউসবক্স (Sequel of কলেজস্ট্রিট)

“ওম”

♥ ♥ ব্যারিকেড ♥ ♥