পিরিয়ডস – ৩
পিরিয়ডস – ৩
- Dip Saha Chowdhury
(রোদ্দুর)
“No Light is Mortal Indeed No Darkness”
গল্পটা
একটু অন্যরকম আগেই বলে রাখি। তবে গল্পটা পরে যদি আপনাদের কারও মনে হয় গল্পটা
কাল্পনিক তবে এটুকু বলে রাখি গল্পের সব চরিত্ররা বাস্তব এবং গল্পোটাও অতিশয়
বাস্তব। আচ্ছা “পিরিয়ডস” শব্দটা শুনলে আপনাদের কি মনে হয়? যন্ত্রনা? ব্যাথা? রক্ত?
কিন্তু পিরিয়ডস কখনো আনন্দের হতে পারে তা ভেবেছেন? অবাক হচ্ছেন? তাহলে চলুন সেই
রাগিনী ইমনের সাথে হেঁটে আসি ২০১৫ সালের কোনো এক মে মাসের রৌদ্রতপ্ত দুপুরে?
দিনটা ছিলো ২১
শে মে ২০১৫, কলেজের গেট পেরিয়েছে রাগিণী ইমন তাও এক বছর হতে চলল। ওরা এখন সেকেন্ড
ইয়ার। সামনের মাল্টিপ্লেক্সে তখন বড়ো ব্যানারে চলছে “Fifty Shades of Grey ”. অনেকদিন সিনেমাতে যায়নি তারা। তারপর এরকম একটা
মুভি কে ছাড়তে চায়? কলেজ বাঙ্ক করার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। সেই মতো কলেজে আসার নাম
করে ইমন দাঁড়িয়ে পরে টিকিটের লাইনে। তখনো তারা জানতো না যে তারা কি ভবিষ্যতের দিকে
পা বাড়াচ্ছে। যথারীতি তারা পেয়েও যায় ড্রেস ক্লাস এর দুটো প্রাইভেট সিট। তার কদিন
পরেই অবশ্য রাগিনীর পিরিয়ডসের ডেট। প্রি-পিরিয়ডস সিম্পটম ও দেখা দিয়েছে। মানে
হালকা ব্যাথা তলপেটে। সেটা কে আমোল না দিয়েই এখানে এসেছে রাগিনী। শো শুরু হলে তারা
দেখে তাদের সেই চেনা দৃশ্য অর্থাৎ পাশের চেয়ারটা দুলছে। তার মাঝে “Smoking
is injurious to health” শব্দটা কোথায়
যেন হারিয়ে গেল। আস্তে আস্তে রাগিনীর ঠোঁট স্পর্শ করলো ইমনের ঠোঁট। ইমনের তর্জনী
যেন ধীরে ধীরে বশ করছে রাগিনীকে। তা কানের লতি ছুঁয়ে স্তনবৃন্ত স্পর্শ করে নেমে
গেল পায়ের দিকে। আস্তে করে ধাক্কা দিয়ে রাগিনী বলল, “ওটা এনেছিস তো? ” । ইমন
সামান্য হেসে বলল, “স্ট্রবেরি।” তার পরের গল্পটা নিজারাই না হয় আন্দাজ করে নেবেন।
সিনেমা শেষ হয়ে যাবার আগেই পথে পা রাখে দুজন। চুল বাঁধতে বাঁধতে রাগিনী বলে,
“পিরিয়ডসের ব্যাথাটা কমে গেছে।” ইমন হাসি মুখে বলে “ম্যাজিক।”
৪ দিন পর,
-
“কিরে
হলো?”
-
নাহ রে
আজও হয়নি
আজ চারদিন হয়ে
গেলো এখনো পিরিয়ডসটা হলো না। এটা খুব পাঞ্চুয়াল রাগিনীর ক্ষেত্রে। কিন্তু কেন এখনো
হলো না। আরে সবে তো দুদিন এক্সট্রা হয়েছে ওটা কোনো ব্যাপারই না। দুজনেই একথা মেনে
নেয়। এভাবে কেটে যায় আরও দুদিন। পিরিয়ডস বাবাজির দেখা নেই। সেদিন সত্যিই এমন কিছুই
হয়নি দুজনেই জানে । তবুও যেন একটা দুর্বলতা গ্রাস করছে দুজনকেই। প্রথম প্রথম
গুগুলে সার্চ করলে যা আসতো তা আশাজনক ছিলো কিন্তু এখন যেন সেগুলোকেও মিথ্যে বলে
মনে হয়।
দশ দিন পর...
সকাল থেকে
বৃষ্টি নেমেছে। নিন্মচাপ। কিন্তু সেই স্বস্তির বৃষ্টিতে মন ভেজেনি দুটো মানুষের,
ইমন শুধু নিজের কাছে একটাই প্রশ্ন করেছে বারবার। “আমার জন্য একটা মেয়ের জীবন শেষ
হয়ে যাবে? আমরা যা করেছি তাতে দুজনের অনুমুতি ছিলো। তাহলে এটা তো পাপ নয়, তবে শাস্তি
কেন?” দেওয়ালে জোরে ঘসি মারে ইমন। হাত বেয়ে তখন রক্তের ধারা নেমে এসেছে অঝোরে।
এই নিয়ে ৭ বার
টয়লেটে গেছে রাগিনী , যদি হয়ে যায়।। যদি কিছু হয়। একটা পিরিয়ডস। হোক না যন্ত্রনা ।
শেষ হয়ে যাই তবুও একটু রক্ত। ওটাই যেন এখন শান্তি। হঠাত করে রাগিনীর মা বলে ওঠে
“ঠিক আছে, কাল ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো।” না!! ওটা করা যাবে না। যদি ধরা পরে যায়।
নিজের হাতে মাথায় জোরে জোরে বারি দিতে থাকে সে। মনে হয় শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছিঁড়ে
ফেলতে পারলে সে বাঁচে। অন্তত এভাবে মরলে অন্তত সম্মান নষ্ট হবে না। ঘরে এসে
ডাইরিটা খুলে কিছু লিখতে শুরু করে সে। ডাইরির পাতা ভিজে যাচ্ছে চোখের জলে। শেষের
কটা লাইন যেন চোখের জলের ঝাপসাতেও স্পষ্ট, “পারলে ক্ষমা করো...”। আজ রাতটাই তাদের
জীবনে শেষ রাত। অন্তত তার জীবনে। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে রাগিনী কাঁদতে কাঁদতে খেয়াল
করেনি। ঘুম থেকে উঠে দেখে সাদা পাজামাটা ভিজে লাল হয়ে গেছে। বিছানার চাদরটা আঁকরে
ধরে কাঁদতে থাকে রাগিনী। হাউহাউ করে। এ কান্নাতে দুঃখ নেই। আছে জয়ী হওয়ার আনন্দ।
পিরিয়ডস যে কখনো দুঃখের নয় আনন্দেরও হয় সেদিন তা বুঝেছিলো রাগিনী। ইমনকে শুধু
এসএমএসে লিখেছিলো। “আমরা কোনো দোষ করিনি।”
Comments
Post a Comment