♥ ♥ ব্যারিকেড ♥ ♥
ব্যারিকেড
-
Dip Saha Chowdhury( #রোদ্দুর )
ইমনের কথা মনে আছে?? আশা করি আছে কারন, রাগিনী আর ইমনকে ভোলা সম্ভব নয়। যে
মানুষ দুটি আমার পাঠকদের ভালোবাসতে শিখিয়েছিল তাদের হয়তো ভোলা সম্ভব নয়। তবে আজকের
গল্প রাগিনী বা ইমনকে ঘিরে নয়। বরং ইমনের খুব কাছের বন্ধু ঋজু আর রোহিনীর গল্প। কোনো কালবৈশাখীর ঝরে আসা পাতায় লেখা গল্পগুলি
যেমন হয় এগল্পও অনেকটা তেমন।
সপ্তমীর সন্ধ্যাতে হঠাত ঠাকুর দেখার প্ল্যান হয় তিন বন্ধুর। সম্বিত, ইমন ও
ঋজুর। ঋজু সম্বিতকে চেনে না। সম্বিত ইমনের বন্ধু। হ্যা এ সেই সম্বিত যার সাথে
আপনাদের “কলেজস্ট্রিট” গল্পে দেখা
হয়েছিলো। মধ্যমগ্রাম থেকে বেড়িয়ে ট্রেন ধরে যখন ওরা দমদম পৌছালো তখন একে একে
এসএমএস বেজে উঠলো সম্বিত ও ইমনের। বলাই বাহুল্য সম্বিতের ফোনে যার এসএমএস এসেছে
তার নাম সন্দীপতা ও ইমনেরটায় রাগিনীর। শুধু যার মোবাইলে আলো জ্বলল না সে হল ঋজু।
জীবনে প্রেম করার চেষ্টা করেনি তা না কিন্তু নিজের মত খোলামেলা কাউকে পায়নি ঋজু। এ
নিয়ে তার আপসোস ও নেই। কিন্তু গল্প শুরু হলো মেট্রোতে কালিঘাট নামার মিনিট ৪০ পর।
হঠাত দলছুট হয়ে যায় ঋজু। দূর্গাপুজোর ভিড়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে ফোন করে ইমনকে এবং
জানতে পারে যে সে একেবারে উল্টো রাস্তায় এসেছে। তাই ঠিক হয় যে আগে স্টেশনে পৌছাবে
সে বাড়ি চলে যেতে পারে । শুধু জানিয়ে দিলেই হবে।
একা মনে চেতলা অগ্রনী ক্লাবের দিকে এগোচ্ছে ঋজু। হঠাত দেখলো একটি মেয়ে ফোনে
কথা বলতে বলতে বেখেয়ালে তার দিকেই আসছে। আর শুধু এদিক ওদিক হাত ছুড়ছে। সঙ্গে সঙ্গে
নিজের “মহামূল্যবান” সম্পত্তি হাত দিয়ে Guard করে ঋজু বলল, “ আরে আরে কি করছেন...?? আমার ইঁদুর ভয় পেয়ে
যাবে তো...”
মেয়েটি ফোনটা কেটে দিয়ে সামান্য একটু মুচকি হেসে। ভ্রু উঁচিয়ে বলল, “ আপনি sure যে ওটা ই তে ইঁদুরই হবে। অ তে
অজগর নয়। দেখুন সে ই তে ইঁদুরই হোক বা অ য়ে অজগর কিন্তু চারিদিকে যে এতো ঈ তে ঈগল
ঘুরছে একটু সাবধানে থাকবেন ”
ঋজু একটু গম্ভীর মুখ করে বলল, “ আচ্ছা আপনি কি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর?? ”
মেয়েটি বলল, “ আমার মাথা ভর্তি বা... মানে চুল দেখে আপনার আমায় বিদ্যাসাগর মনে
হল?? আর আমার নাম জানার জন্য এরকম একটা বাজে জোক করার চেষ্টা আপনাকেই প্রথম
দেখলাম... আমার নাম রোহিনী। আর এই আপনিটা যদি তুমিতে আপগ্রেড হয় তাহলে ভালোই হত...
আরকি... ”
-
আজ্ঞে, আমার নাম ঋজু ঘোষাল। আমরা কি বন্ধু হতে পারি??
-
আচ্ছা... তার আগে বলো SRK না সালমান??
-
SRK
-
রবীন্দ্রনাথ না কাজী??
-
Tagore...
-
আরে বাঙালি হতে শেখ... আচ্ছা লাবন্য না কেডি?
-
কেডি
-
চকলেট না ভ্যানিলা।
-
প্রশ্নটা হচ্ছে কিসের ফ্লেভার জানতে চাও??
মিছে রাগ দেখিয়ে রোহিনী বলল,
-
“ একটা ছেলেকে নিশ্চই এ প্রশ্ন করা যুক্তিহীন,
আইসক্রিম!!!!! ”
-
ওওওওও...... ভ্যানিলা...
-
মেয়েদের কোন অংশটা পছন্দ??
প্রশ্নটা করেই অন্যদিকে তাকালো রোহিণী...
কিছুটা ভেবে নিয়ে ঋজু বলল,
-
“ নির্ভর করছে, মেয়েটি আমার দিকে আসছে না... আমার থেকে চলে
যাচ্ছে... You
Know Point of View Matters”
-
নাহ... আপনার সাথে পারা যাবে না... আমি আমার হার স্বীকার
করলাম... আর আমার হারের মাঝেই আমার বন্ধুত্ব লিখে দিলাম।
-
তা গলা জড়াবেন না হাতে হাত??
-
মানে??
-
না মানে ... বন্ধুত্বর শুরু তো তাই ... কিভাবে করবেন??
উত্তর দিলো... রোহিনী... তবে একটা গানের লাইনে...
-
“সুর ছিল গান ছিল এই প্রাণে ঐ দুটি হাত ছিলো এই হাতেকি কথা বলছিলে মন জানে…”
-
কিন্তু এটা তো পূর্ণিমা নয়... কয়দিন আগে মহালয়া গেলো...
-
Exactly.. আমিও তো তাই বলছি... হাতে হাত রেখে ব্যারিকেড করবো না...
বলে রোহিনী দু চোখ বন্ধ করে একটা দুষ্টু হাসি দিলো...
ততক্ষনে তারা হাঁটতে হাঁটতে অগ্রনীর সামনে চলে এসেছে... একটা ফাঁকা জায়গায় তারা Hug করলো... শুরু হলো একটা নতুন
গল্প... Hug
টা
করে রোহিনী বলল,
-
“স্যার এবার একটু মিষ্টি মুখ হয়ে যাক... আসলে খুব চকলেট
খেতে ইচ্ছে করছে... আর হ্যা আমিও SRK এর Fan. তো
আশা করি তুমিও বিশ্বাস করো যে বন্ধুত্ব অনেক কিছু শুরুর ইঙ্গিত দেয়। হতে পারি আমরা
অচেনা... একজন অপরকে মাত্র কয়েক ঘন্টা চিনি ... কিন্তু এটাও সত্যি যে 24 টা ঘন্টা মিলে একটা দিন। ৩৬৫
টা দিন মিলে একটা বছর, আর ৬০-৭০ বছর নিয়ে
একটি জীবন... তাহলে...”
আর কিছু বলল না... ঋজু ... এতোদিন ধরে যে ফিলিংসগুলি সে
ব্যারিকেড করে রেখেছিলো ... ভেবেছিলো জীবনে আর কখনো True Love করবে না... একটা
সবকিছু তছনছ হয়ে গেলো ঋজুর... আবার কি কোনো পাপ করতে চলেছে সে... কিন্তু কথায় যে
বলে প্রেম মানে মিষ্টি পাপ?? আর কিছু ভাবতে পারে না ঋজু। চকলেটের স্টলে দাঁড়িয়ে রোহিনীর
দিকে তাকিয়ে... চোখ নামিয়ে নেয়... ফোনের ফেসবুকটা খুলে একটা স্ট্যাটাস দেয় সে
“ ঘন্টায় ঘন্টায় বছর মিলিয়ে ৭০টা বসন্ত তোমায় দিলাম...
তুমিই কি সে, যাকে শুভদৃষ্টির ওপারে খুজেছিলাম...? ”
মাথা উঁচু করে দেখলো রোহিনী আপন মনে ফোন ঘাঁটছে...
দোকানদারকে টাকা দিয়ে যখন চকলেট নিয়ে যখন ফিরে আসছে ঋজু ,
ফোনটা কেঁপে উঠলো... একটা নোটিফিকেশন একটা ফ্রেন্ডরিকোয়েস্ট... । ব্যাতিক্রমী ভাবে
আগে নোটিফিকেশনটাই খুলল ঋজু... “ Rohini Chakraborty Has Commented on Your Post.” চটপট খুলে ফেলল
সেটা
তাতে লেখা... “ চিন্তা নেই অন্য কারো সাথে বসিয়ে দিলেও আমি
চলে আসবো Vag ke!! Dun...Dun..Dun..
Dun.. ”
একটা লাভ রিয়াক্ট করে এগিয়ে গেলো ঋজু ... রোহিনীর চোখ এখন অন্য গল্প বলছে... তার
চোখের সব উন্মাদনাকে ভেঙ্গে একটা স্নিগ্ধতা যেন প্রেমের নতুন গান লিখছে...
“ গা জুড়ে নেমেছে
প্রেমের জ্বর,
তাই থার্মোমিটারে
সাজিয়েছি শহর।
যারা বোঝেনি...
বুঝবেও না...
তোর আমার এক পলকের
কদর”
------
Comments
Post a Comment