ধনুর্ধর





ধনুর্ধর
-Dip Saha Chowdhury
“কর্ণ” – মহাভারতের সবচেয়ে বিতর্কিত চরিত্র তবে ছোটবেলা থেকেই আমার তাকে রহস্যময় মনে হয় আর এই জানার আকাঙ্খা আজ এই লেখায় আবদ্ধ্ব করতে চললাম কুমারী অবস্থায় কুন্তি ও সূর্যদেবের ঔরসে জন্ম হয় এক পুত্রের কিন্তু কুমারী অবস্থায় সন্তানলাভ এ এক কলঙ্ক এই কলঙ্কের হাত থেকে মুক্তি পেতে তিনি ভাসিয়ে দিলেন এই সন্তানকে পরবর্তীতে এই সন্তান লাভ করেন   মহাভারতের ধৃতরাষ্ট্রের সারথি অধিরথ কিন্তু এর মাঝে এক ব্যাপার ঘটে কুন্তি সুর্‍্যের কাছে এক বর চান তার সন্তান এর ৫ টি গুনে গুনবান হবে- সে হবে সদা সত্যবাদী, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী হবে সে, লক্ষ্য হবে তীরের ফলার মত স্থির সবচেয়ে সুন্দর হবে রুপে বুদ্ধি হবে তাৎক্ষনিক সেই ৫ গুন নিয়ে জন্ম নেয় কর্ণ  কিন্তু হতে পারে সে সুর্‍্যপুত্র কিন্তু জন্ম হয়েছে তার সুতপুত্র রুপেছোটবেলা থেকে সে স্বীকার হয়েছে অনেক লাঞ্চনা , বঞ্চনার। কিন্তু তার জীবনের লক্ষ্যে সে তীরের ফলার মতো অবিচল ছিলেন। দ্রোনাচার্যের কাছে গেলেন অস্ত্রশিক্ষা নিতে। কিন্তু বর্নাশ্রমের নাগপাশে শিক্ষা দিতে রাজি হলেম মা তিনি। ঠিক যেমন ভাবে তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন একলব্যকে। কিন্তু মহাভারত যে যেকোনো গাথা নয় এ গাথা স্বয়ং কর্মচক্রের গাথা। কর্ণ শিক্ষিত হলেন গুরু পরশুরামের কাছে। কিন্তু কে এই গুরু পরশুরাম? গুরু দ্রোনাচার্যের গুরুদেব ইনি। জীবনের শিক্ষায় এভাবে পঞ্চপাণ্ডবের অগ্যাতে গড়ে ওঠে পৃথিবীর দ্বিতীয় ধনুর্ধর কর্ণ। ভাবছেন প্রথম অর্জুন? একদমই নয়। প্রথম হলেন স্ব-শিক্ষায় শিক্ষিত একলব্য। তবে কর্ণ দ্বিতীয় কিনা তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সংশয় আছে কারন একলব্য ও কর্ণ কখনই সামনাসামনি হয়নি। এবার একটু ফ্ল্যাশব্যাকে যাওয়া যাক। আমরা একজনকে ভুলে যাচ্ছি। মহাভারতের নায়িকা দ্রৌপদি।দ্রৌপদি ভগবানের কাছে বর চায় যে তার স্বামী হবে সত্যবাদী, শক্তিশালি, রুপবান, স্থির লক্ষ্যধারী ও বুদ্ধিমান। আর এই পাচ গুনে সমৃদ্ধ ছিলেন কর্ণ। স্বয়ম্বরে তার রুপ ও গুনে মুগ্ধ হয়ে তার প্রেমে পরেছিলেন দ্রৌপদি কিন্তু যেহেতু সে সারথিপুত্র তাই তাকে প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। বিবাহ হয় অর্জুনের সাথে কিন্তু তিনি যে বর চেয়েছেন সেটা তো পুর্ন হবে তাই তাকে বিবাহ করতে হয় পঞ্চপাণ্ডবকে যার মধ্যে যুধিষ্ঠির- সত্যবাদী, ভীম- শক্তিশালী, অর্জুন- স্থির লক্ষ্যধারী , নকুল- রুপবান ও সহদেব- বুদ্ধিমান। এগিয়ে চলে মহাভারতের গল্প। এ গল্প যোগ্যতার ওপর যোগ্য ব্যাক্তি নির্ধারনের গল্প। দ্রৌপদির রুপে মুগ্ধ হয়ে তাকে কাছে পেতে পাতাল ফুরে উঠে আসে বাসুকি নাগ।নাগরাজ। সেদিন দ্রৌপদির সম্মান রক্ষা করতে পারেন নি পঞ্চপাণ্ডব। হেনস্থা হতে হয়েছিল পাঞ্চালিকে। কারন বাসুকিকে হত্যা করার শক্তি তাদের ছিল না। দ্রৌপদি অনুরোধ করেন অঙ্গরাজ কর্ণকে। শত অপমান সত্বেও হস্তিনাপুরে পদার্পণ করেন কর্ণ। সুর্‍্যের কাছে পাওয়া সবচেয়ে মারত্মক অস্ত্র আগ্নি-কাটারি। যা এতটাই মারাত্মক যে নয় হাজার নক্ষত্রের তাপ উৎপন্ন করতে পারে। এই অস্ত্র কুরুখেত্রের রণভূমিকে এক মুহূর্তে ছাইয়ে পরিনত করত পারত। কিন্তু কর্ণ ভ্রূক্ষেপ না করেই সে অস্ত্র ব্যাবহার করে বাসুকিকে পরাজিত করে দ্রৌপদিকে সম্মান দিয়েছিলো। পাশা খেলার সভায় যে মানুষটি বস্ত্র হরনের বিরোধিতা করেছিলেন তিনি হলেন কর্ণ। গল্প এগিয়ে চলে কুরুক্ষেত্রে প্রান্তরে সেদিন সুর্য ডুবতে মাত্র কয়েক মুহূর্ত বাকি দেবরাজ ইন্দ্রের কাছে তিনি আগে থেকেই ইন্দ্রাস্ত্র চেয়ে নিয়েছেন কিন্তু তার পরিবর্তে তাকে সূর্য কবচ দান করতে হয় এটা দেবরাজ ইন্দ্রের একটি চাল ছিলো কারন কবচ পরা অবস্থায় কর্ণকে মারা সম্ভব নয় সুর্যাস্তের পুর্বে অর্জুন ও কর্ণ একে অপরের সমুখিন হন ঠিক এমত অবস্থায় কাঁদায় তার রথের চাকা বসে যায় আবেদন করেন কর্ণ যে চাকা তোলার অবকাশে তাকে যেন যুদ্ধে আমন্ত্রন না করা হয়। কিন্তু কৃষ্ণ অর্জুনকে বলেন বান চালাতে। দেবরাজ ইন্দ্র ও শ্রীকৃষ্ণের মিলিত ছলনায় সেদিন পরাজিত হন কর্ণ। সেদিন এই ছলের সাহায্য নিতে হয়েছিল পাণ্ডবদের। কারন কর্ণ যদি আর কিছু মুহুর্ত যদি টিকে থাকতো কর্ণ তাহলে মহাভারতের শেষটা হয়তো অন্য হত। কারন কর্ণ নিজেই পঞ্চ পাণ্ডবের সব গুন একাই নিজের মধ্যে আবদ্ধ ছিলো। সেদিন অস্ত্রহীন যোদ্ধাকে যুদ্ধে আমন্ত্রন করে কাপুরুষের পরিচয় দিয়েছিলেন অর্জুন। হয়তো আবার এটাও সত্যি যে কর্ণ যদি যুদ্ধে নামতেন তাহলে মহাভারত আর এক গল্প থাকতো না। তাই হয়তো কর্ণকে সরে যেতে হয়েছিল। তাই হয়ত শ্রীকৃষ্ণ বর দান করেছিলেন যে কর্ণ চিরকাল মানুষের মনে জায়গা পাবে। বহু বঞ্চনার সাক্ষী হয়ে থাকা কর্ণের জীবনের পরাজয় তাই কোনো পরাজয় না বরং আত্ম বলিদান বলে আমার মনে হয়। কর্ণকে সারা জীবন সুতপুত্রের অপমান সহ্য করতে হয়েছিল বলেন মহাভারতের মহারণে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ নিজে অর্জুনের রথের সারথি হয়ে এটা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে বর্নাশ্রম, জাতিভেদ তা মানুষের সৃষ্ট। স্বয়ং পুরুষোত্তম তার অংশ নন। তিনি সবার জন্য। তার চোখে কর্ণও একজন যোদ্ধা তথা অর্জুনের চাইতেও বড় যোদ্ধা।

Comments

Popular posts from this blog

ফিউসবক্স (Sequel of কলেজস্ট্রিট)

“ওম”

♥ ♥ ব্যারিকেড ♥ ♥