“ওম”
“ওম”
- Dip Saha Chowdhury (#রোদ্দুর)
যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয়
যে পৃথিবীতে কোন ধর্ম সবার আগে ছিল তাহলে কেউ বলবেন হিন্দু , কেউ বলবেন মুসলিম,
কেউ বলবেন খ্রিস্টান। কিন্তু এভাবে তো আর এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া সম্ভব না। আসলে
আমরা কখনই আমদের ভাবনা চিন্তাকে বিস্তৃত করতে রাজি না। যেমন অনেকটা কুয়োর ব্যাঙের
মত। এই ধর্মের নামগুলি অনেকটা কুয়োর মত। আমরা সবাই ব্যাস্ত যে এটা বোঝাতে কোন
কুয়োটা আগে কাটা হয়েছে কারো এ ব্যাপারে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই যে মাটির নিচে জলটা কে
দিলো?? যেটা না থাকলে কুয়োর কোনো মানেই হয়না। যে ধর্ম সবার আগে ছিলো তাকে বলে
সনাতন ধর্ম। হ্যাঁ সনাতন ধর্ম। যে ধর্ম কোনো কুয়োতে পৃথক হয় না বরং এটা মাটির নিচে
সেই জল যা প্রতি কুয়োতে জলের যোগান দেয়। কিন্তু আমি এতো কথা কেন বলছি?? আমার বিষয়
তো “ওম”। না বিশ্বাস করুন আমি ওম নিয়েই বলব। আসলে তার আগে আমি এটাই বোঝাতে চাইছি
যে সব কিছুর গোড়া জানতে পারলে বিষয়টি নিয়ে কোনো দ্বন্ধ থাকে না। যেমন ধরুন আপনি
কোনো একটি গাছে উঠতে চাইলে কোথায় আগে এসে দাঁড়াবেন?? নিশ্চয়ই গাছের গোঁড়ায়। “ওম”
হচ্ছে সেই গোঁড়া । না কোনো গাছের গোঁড়া নয়। অক্ষরের গোঁড়া। পুরান বলে পৃথিবীতে যখন
কিছু ছিলো না তখন একটাই শক্তি ছিলো শব্দ বা ধ্বনি। আর এই ধ্বনিরর নাম “ওম”। ধ্বনির
লিখিত রুপকে আমরা অক্ষর বলি। কিন্তু সংস্কৃত ভাষায় অক্ষর মানে কিন্তু তা নয়। সংস্কৃত
ভাষায় ধ্বনির লিখিত রুপকে লিপি বলে। তাহলে অক্ষর কাকে বলে?? পৃথিবীর প্রাচীনতম
ভাষা সংস্কৃত বলে অক্ষর কথাটির মানে অক্ষয় যা। অর্থাৎ যার ধ্বংস নেই, চিরন্তন।
আবার যার ধংস নেই তার আবার সৃষ্টিও নেই। কারন সৃষ্ট জিনিসের ধ্বংস অনিবার্য। আর Physics এর ভাষায় যার
সৃষ্টি বা ধ্বংস কিছুই নেই শুধু অস্তিত্ব আছে তাকে শক্তি বলে। আর সংস্কৃততে প্রথম
আদিতম অক্ষরের নাম হল “ওম”। তাহলে একে একে দুই করলে যা দাড়ায় তা হল “ওম”- এর
সৃষ্টি বা ধ্বংস কিছুই নেই আবার এর রুপ আছে যা আমরা অক্ষরের মাধ্যমে লিখতে পারি।
অর্থাৎ যখন আমরা ওম লিখছি আদতে তখন আমরা এক শক্তিকে রুপ দিচ্ছি। ভেবে দেখুন একটি
শক্তি যা পৃথিবীর আদিতম। তা আপনি লিখতে পারেন একটি অক্ষরে। যার নাম “ওম”। এবার কি
আছে এই ওমে? ওম কে ভাংলে চারটি শব্দ পাওয়া যায়। অ-ও-ম- এবং একটি শব্দ যা নীরব।
বাকি গুলি নিয়ে পরে আসছি শেষ ধ্বনিটি নীরব কেন? নীরব আবার ধ্বনি হতে পারে? যদি বলি
পারে?? আমদের কান যে শব্দ শুনতে পায় তার মাত্রা ২০Hz –
20000 Hz. তার মানে হল যে পৃথিবীতে এমন অনেক শব্দ আছে যা 20000 Hz থেকে বেশি। কিন্তু তা আমরা শুনতে পাই না। কিন্তু আমরা তাকে
নীরব মনে করি। হ্যাঁ একেই বলে “Sound
of Silence”. অর্থাৎ নীরবতার মধ্যেও
শব্দ থাকতে পারে। এবার একটা পরীক্ষা। চোখ বন্ধ করুন। আর নিজের কানের উপর জোর দিন,
বেশি না ৫ মিনিট। এবার চেষ্টা করুন এমন কিছু শব্দ যা আপনার চারিপাশেই আছে কিন্তু
আপনি খেয়াল করেন নি কোনোদিনও। দেখবেন একটা মুহূর্তে গিয়ে খুব কম সময়ের জন্য এমন
একটি শব্দ শুনতে পাবেন যা সবার থেকে কিছুটা আলাদা। খুব কম সময়ের জন্য। তাহলে এই
শব্দটা কি ভুল?? একদমই না। আসলে ঐ কিছু সময়ের জন্য অবচেতন মন আপনার শোনার ক্ষমতাকে
কিঞ্চিত বাড়িয়ে তুলেছিল। যার জন্য আপনি আপনার চারিপাশের Sound of Silence এর মধ্যে থাকা লক্ষ কোটি
শব্দের মধ্যে থাকা একটি শব্দ শুনতে পেলেন। আমাদের দেশের মুনি ঋষিরা যুগ যুগ ধরে এই
শব্দই শোনার চেষ্টা করেছেন ধ্যানের মধ্যে। এবার কথা হল ধ্যানের মধ্যেই কেন? আপনি
শব্দটি ক্ষণিকের জন্য শুনতে পেলেন কে জানেন?? আমি বলছি আসলে আমাদের মধ্যে দুটি মন
আছে পৃথিবীর প্রাচীনতম সাহিত্য যাদের নাম দিয়েছে - চেতন ও অবচেতন মন। বিঞ্জানের
ভাষায় এরা Conscious Mind , Sub-Conscious Mind. এবার ভাবছেন
এরা কোন মহারথী?? আরে মহারথী তো এরাই। চেতন মন হচ্ছে তা আমরা যে দেখি বা অনুভব করি
অর্থাৎ পঞ্চইন্দ্রিয়গুলিকে মিলিয়ে যা তৈরি হয় বা যা আমরা গ্রহন করি। আর আরেকটি হল
অবচেতন মন যা চেতন মন থেকে আমরা যে সিদ্ধান্ত গ্রহন করি। সহজ ভাবে বলি একটা
বাচ্চাকে আপনি প্রতিদিন বলেন খাবারটা গরম হাত দিয়ো না কিন্তু সে শোনে না। কিন্তু
একদিন সে ভুল করে হাত দিয়ে ফেলল এবং হাত পুড়ে গেল তারপর থেকে সে আর হাত দেয় না।
এবার ব্যাপারটা হলটা কী? আসলে যেটা হল। ওর হাত গরমে পুড়ল অর্থাৎ ওর চেতন মন
প্রচণ্ড গরম অনুভব করলো এবং ওর অবচেতন মন সিধান্ত নিল যে এই অনুভুতিটা বেদনাদায়ক। তাই
আর সে কখনও খাবার ছুঁতে গেলে তার অবচেতন মন সেই সিধান্তকে বারবার মনে করিয়ে দেয়
তাই এখন হতে সেই বেদনার অনুভুতি না থাকলেও সিধান্তটা রয়ে গেছে। তাই বহুকাল আগে নামতা কিভাবে লিখতে হয় শিখেছিলাম
আজ আর অত কিছু না মনে করলেও ২X3 বললে ৬ আমরা অজান্তেই বলে
দি। আসলে এই অবচেতন মন হল সেই অংশ যা আমদের ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। এবার সারাদিন
আমাদের চেতন মন কিছু না কিছু অনুভব করে তাই অবচেতন মন কোনোভাবে অন্য কাজে আমাদের
নিয়োজিত করতে পারে না। এবার চাইলেও আপনি আপনার পঞ্চইন্দ্রিয়গুলিকে যেমন চোখ, নাক,
কানকে বড় করতে পারবেন না। অর্থাৎ আমাদের চেতন মন সীমিত। কিন্তু অবচেতন মন এর সীমা
আছে কিন্তু তা আমরা তা জানি না। বা বলতে পারেন আমি জেনেও বলব না। কারন এই প্রবন্ধে
তা অপ্রাসঙ্গিক। আপনাকে যখন আমি চোখ বন্ধ
করতে বলেছিলাম তখন আসলে ঐ ক্ষণিকের জন্য আপনার চেতন মন শান্ত হয়েছিলে। আর ঠিক তখনই
আপনার অবচেতন মন আপনাকে না জানিয়ে আপনার শোনার ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দিয়েছিলো যাতে করে
আপনি Sound of Silence এর একটি শব্দ বা দুটি শব্দ অনুভব
করেছেন তাহলে ভাবুন আমাদের মুনিরা বছরের পর বছর ধ্যান করে কত শব্দ শুনেছেন আর
সৃষ্টির কত রহস্য ভেদ করেছেন। এবার ওম নিয়ে পরা যাক। পুরান মতে পৃথিবীর আদিমতম এই
শব্দের উৎপত্তি আদিদেব মাহাদেবের ডামরু থেকে। এবং এটা তার সবচেয়ে প্রিয় শব্দ।
মহাদেবের আরেক নাম মহাযোগী বা যোগরাজ । উনি সারাদিন ধ্যানে মগ্ন থেকে জ্ঞান অর্জন
করছেন সেই সৃষ্টি থেকে। আর আমদের মধ্যে একটা ভুল ধারনা আছে যে আমরা ওম বলে ধ্যান
করার চেষ্টা করি। আদতে কিন্তু তা নয়। ওম বলে আমরা মহাদেব আমাদের মধ্যে জাগ্রত করার
চেষ্টা করি মহাদেব ধীরে ধীরে আমাদের মধ্যে জাগ্রত হয়ে আমদের মধ্যে ধ্যান শুরু করেন
আর আমরা জ্ঞান অর্জন শুরু করি, পৃথিবীর আদিতম জ্ঞান । অজানা, অচেনা। তাও আবার বই
পরে নয় নিজের মধ্যে ঝুঁকে পরে। বিশ্বাস করুন বাইরে কোনো জ্ঞান নেই যা আছে আপনার
ভেতরেই আছে। ওম উচ্চারনে আগে আমরা যে “ও” বলি তার সুচনা হয় আমাদের ষড়যন্ত্র থেকে। “উ”
বলি তা বাহিত হয় জিহ্বাতে আর “ম” যা শেষ হয় ওষ্ঠে। অর্থাৎ পুরো স্বরতন্ত্র কে একটি
ধ্বনি একত্রিত করে। আর পরে যে নীরবতা তা আসলে এই শব্দের ফলে উৎপন্ন ফলাফলকে খোঁজে
যা আমাদের আমাদের চারিপাশে থাকা আদিম অথচ নতুন কিছুকে তুলে ধরে আমাদের অবচেতন মনের
অকপটে। কোনো শক্তির সরলতম ধর্ম Frequency. ওম এর Frequency
432Hz। মনোবিঞ্জান বলে ঠিক এই Frequency টাই আমদের অবচেতন Physics এর ভাষায় কোনো
কিছুর কম্পন বা স্পন্দনে শব্দের সৃষ্টি হয়। Big-Bang এর সময়
প্রচুর কম্পন হয়েছিল। অর্থাৎ প্রথম যে শক্তি মহাবিশ্বে সৃষ্টি হয়েছিলো তা হল শব্দ।
যে ব্ল্যাক হোলে এই মহাজগৎ শেষ হবে তা সব শক্তিকে নিজের কেন্দ্রে নিতে সক্ষম শুধু
শব্দ ছাড়া। যেখানে জীবন আছে সেখানে স্পন্দন আছে সেখানে শব্দ আছে আর শব্দের আদি হলো
ওম অর্থাৎ সেখানে ওম আছে। অর্থাৎ যেখানে সৃষ্টি আছে সেখানে ওম আছে। আর একটা অদ্ভুত
তথ্য দিই?? পৃথিবীর ঘুর্ননের Frequency কত জানেন?? ৪৩২Hz.
অর্থাৎ পৃথিবীর ঘুর্ননের যদি কোনো শব্দ তৈরি হত তাহলে তার
Frequency হত ৪৩২Hz যার মানে “ওম”
পরের পর্বে কি থাকছে??
একটা ছোট্ট প্রশ্নের আকাশচুম্বি উত্তর “রামায়নের পর মহাভারত লেখার তাৎপর্য কী?? কি
ভাবে সৃষ্টি হয়েছিল হিন্দু ধর্ম??” কথা দিলাম বহু বহু প্রচিলিত ধারনা ভাঙতে চলেছে।
ভালো থাকবেন।
Comments
Post a Comment