“কুরুক্ষেত্রের শেষ সুর্য্য”

“কুরুক্ষেত্রের শেষ সুর্য্য”

“কুরুক্ষেত্রের শেষ সুর্য্য”

- দীপ সাহা চৌধুরী

(#রোদ্দুর )

চারিদিকে ছড়িয়ে আছে আগুন, দূরে পুড়ছে কিছু সৈনিকের দেহ।চারিদিকে কান্নার রব। শেষ হয়েছে কুরুক্ষেত্র। চোখে জল নিয়ে, পার্থ জিজ্ঞাসা করে, “ হে মাধব, এ যুদ্ধের কি সত্যিই কোনো দরকার ছিলো?” ,

সামান্য হাসেন মাধব। মন তারও সামান্য ভারাক্রান্ত। দূরের আকাশে একটা তারাকে দেখিয়ে সে বলে,

- — আচ্ছা! পার্থ, ঐ তারার আলোরও কোনো দরকার নেই তো। তবুও সে জ্বলে কেন? আসলে আমরা সবকিছুর তাৎক্ষণিক ফলাফল খুঁজতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। কে বলতে পারে এটাই হয়তো এ মহাজগতের শেষ তারা? আবার কোনো ভ্রান্ত পথিকের পথপ্রদর্শক। আদতে এই যুদ্ধ না হলেও সময় কিন্তু চলতই, এ যুদ্ধও হতো, তবে হয়তো চরিত্রগুলো আবশ্যিক, নামগুলি নয়। একটু ভেবে দেখতো পার্থ, তোমরা এই হস্তিনাপুরের উপর ৩৪ বছর রাজত্ব করলে তখন তো কেউ বলোনি যে, “কেন করছি আমরা রাজত্ব ?” আজ যখন কৌরবরা রাজত্ব করলো তখনো তো ক্ষমা করতে পারলে না, অধিকার দেখালে। রাজত্ব তো করতেই পারতে কিন্তু হস্তিনাপুরই কেন?সারা ভারতবর্ষ তোমাদের জন্য দুয়ার খুলে দিতো। যদি একটা ক্ষমা করতে পারতে। তখন মনে পরেনি যে এরা তোমার পরিবারের লোক? আর যখন বললাম যুদ্ধ করো, তখন তোমার মনে হলো এরা ‘পরিবার’ ? তখন তো আমি আর ফিরিয়ে আনতে পারিনা তোমায়। কিসের অহংকার গুরু দ্রোনাচার্য্যের যে, একালভ্যকে তার বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ গুরুদক্ষিণা হিসাবে চেয়ে নিলেন, যাতে তুমি শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসাতে পারো। ঘটনাচক্রে আমাকে ধর্ম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে, আমার ভ্রাতসপুত্রসম“একলব্য”কে মারতে হয়। কারন ধর্মপ্রতিষ্ঠা আমায় করতেই হতো। অহঙ্কারে অন্ধ দ্রোনাচার্য্য এটা ভুলেই গেছিলেন যে উনি একজন গুরু, গুরুর দায়িত্ব শিক্ষা দেওয়া, হনন করা নয়। একালব্য তোমার সমান যোদ্ধাই ছিলো। এরপর আসি, কর্নের কথায়, মহাবীর, দাতা-কর্ন তাহার সব জ্ঞানই বর্তমান। শ্রেষ্ঠ ধনুর্ধর তিনি, পঞ্চ-পান্ডবের সব কটি গুন নিয়ে একাই বিরাজওমান এই বীর। তাও অহংকারের বশে বেছে নিলেন ভুল পক্ষ। সেই সভায় যদি রাজা ধ্রুপদ তাকে “সুতপুত্র“ নামে অপমান না করতেন বা কর্ন যদি ক্ষমা করে দিতে পারতেন তাহলে অঙ্গরাজের এ অহংকার জন্মাতই না। আর নিজের ভাইয়ের হত্যা তোমাকেও করতেই হতো না অর্জুন। অর্জুন তুমিও কিন্তু মানতে পারো নি, কর্ন যে তোমার সমকক্ষ। কিসের এতো অহংকার তোমাদের বর্ণ নিয়ে। আমিই তো হলাম সেই রথের সারথী। যেই বর্ণের মানুষ বীর কর্নও ছিলো। পিতামহ ভীষ্ম, যিনি ইচ্ছামৃত্যুর বর পেয়েছেন কিন্তু ওনার বোঝা উচিত ছিল যে প্রত্যেকেরই এটা মেনে নেওয়া উচিত, তাদের একসময় সরে যেতে হয়। নতুনকে জায়গা করে দিতে হয়। গদি ধরে পরে থাকা একটা “অহংকার” মাত্র। তাই কুরুক্ষেত্রে তাকে তীরের শয্যায় শুইয়ে প্রকৃতই বুঝিয়ে দিয়েছে যে কর্ম-অক্ষম হয়ে, যুদ্ধে প্রান্তরে দাঁড়ানোর সাজা কেমন হয়? আরেকজন অশ্বত্থামা, যার নাকি “মৃত্যুভয়” নেই। এটাই তার অহংকার। তাই তার কাছ থেকে আমি তার মৃত্যুই কেঁড়ে নিলাম, বুঝুক অমরত্ব আসলে পাপ। অহংকারের বশে কি পেলে তোমরা? এক অন্ধ বাবা হারালো ১০০ ছেলে, দেশ হারালো তার কতো সৈনিক। তুমি হারালে অভিমন্যু, আরব ভীম ঘটতকচকে। মাতা কুন্তি হারালেন পুত্র কর্নকে। কোনো কিছুরই আবশ্যকতা ছিলো না। যদি একটু ক্ষমা করতে। কিন্তু এটুকু জেনো, জীবনে এ যুদ্ধের দরকার ছিলো কারন পরবর্তী প্রজন্ম এই জ্ঞানকে ধারন করবে যুগ যুগ ধরে। জানবে যে ক্ষমাটাই আসল কিন্তু ক্ষমা না করতে পারলে যুদ্ধ করো। “যুদ্ধে জিতলে ক্ষমা করো, হারলে ক্ষমা চাও।” আর যেখানে যেখানে ক্ষমা করতে জানবে না, যুদ্ধ করতেই হবে। অহংকারে পতনের গল্প এই মহাভারত। এরপর বহু মানুষ আমায় মাতা গান্ধারীর মতো এটাই ভাববে যে, আমিই এই কুরুক্ষেত্র নামে মহা-হিংসার মুল কান্ডারী। আবার কেউ মানবে প্রেমের মুর্ত প্রতীক। সকলকেই আমি ক্ষমা করলাম। ক্ষমাই প্রেমের মুলমন্ত্র। তোমার মতো হাজারো পার্থকে আমি যুগে যুগে তৈরী করেছি, ভবিষ্যতেও করবো। কেউই মহান নয়।

চোখ জলে ভরে আসে পার্থর। পিঠে চাপর দিয়ে বাসুদেব বলেন,

- দ্বাপর যুগের শেষ সুর্য্যকে নমন করো! পরিবর্তনই মুল, তথপি শ্রেষ্ঠ।

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

ফিউসবক্স (Sequel of কলেজস্ট্রিট)

“ওম”

♥ ♥ ব্যারিকেড ♥ ♥