ডিভোর্স



ডিভোর্স
-   Dip Saha Chowdhury
রোদ্দুর


প্রিয়া হাতের মোবাইলটা রাগের মাথায় ছুঁড়ে মারলো খুব শখের আয়নাটার দিকে। মুহুর্তের মধ্যে নিজের অবয়বটা নিজের সামনেই ভেঙে চুরমার হয়ে যেতে দেখলো। আজ অন্তত... অন্তত আজ... বারবার বলেছিলো প্রিয়া যে “আজ অফিস থেকে তাড়াতাড়ি এসো” কিন্তু আজও সেই লেট করলো রিহান... এখনো বাড়ি ঢুকতে পারে নি সে। মাঝে মাঝে মনে হয় বিয়েটা যে কেনোই বা করেছিলো। বিয়ের আগে সব কিছুতে কেয়ার করতো। আর বিয়ের পর সব বদলে গেছে। যেন একদম অচেনা একজন মানুষ, সারাদিন ব্যাস্ত। আজ তাদের দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকী তাও একটু তাড়াতাড়ি আসতে পারলো না। বিয়ের আগেই প্ল্যান করেছিলো যে বিয়েটা ১৪ই ফেব্রুয়ারি করবে তারা, যাতে প্রতি বছর ভালোবাসার দিনটা তাদের দিন নামেই পরিচিত হয়। আজ সবাই কতো জায়গায় যাচ্ছে, কতো ফেসবুক পোষ্ট আর এই প্রিয়া নামের এক হতভাগিনী বাড়িতে বসে গাবজাল দিচ্ছে। নিজের হাতে মুখটা ঢেকে নেয় প্রিয়া, হাতের কোনা দিয়ে জল গড়িয়ে তার ল্যাগিন্সের একটা পাশ ক্রমশ ভিজিয়ে দিচ্ছে অনবরত। হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে একসময় গলা শুকিয়ে আসে প্রিয়ার। একটু হালকা শুকনো কাশি দিয়ে, রান্নাঘরে গিয়ে বোতল থেকে কিছুটা জল গলায় ঢেলে নেয় প্রিয়া। জানলার কাঁচে তাকিয়ে দেখে হঠাত বৃষ্টি নেমেছে। ফাল্গুন মাসে এমন বৃষ্টি? ফাগুণও কি প্রেমে পড়েছে নাকি? কিন্তু রিহান আসবে কি করে? সত্যি আজ একটু বেশিই বলা হয়ে গেছে, কি আর করবে প্রিয়া , মাথাটা যে হঠাত গরম হয়ে উঠেছিলো। ও ঠিক আছে ও আসলেই কিছুক্ষণ পর এমনিই ম্যানেজ হয়ে যাবে। এমনটা তো এর আগেও হয়েছে কিন্তু আয়নাটা!! ওটা দেখলে তো তার রক্ষে নেই।
    ফোনটা বেজে ওঠে প্রিয়ার। খাটের নিচে গিয়ে পড়েছে ফোনটা। সেটা আনতে গিয়ে কিছুটা বেগ পেতে হলো তার, হাতে একটু কাঁচও ফুটলো। আউ!! করে আওয়াজ করে ফোনটা বের করতেই দেখলো অন্তরার ফোন।
-   কি রে? কেমন কাটছে আপনার বিবাহবার্ষিকী?
-   বা**এর বিবাহবার্ষিকী... পুরো জঘন্য।
-   থাক!! আর ‘খাঁদের মিমি চক্রবর্তী’ হতে হবে না। কি ডার্লিং বাড়ি ফেরে নি?
-   ওর নাম আমি শুনতে চাইনা!!! আর তুই ফোন কাট... ভালো লাগছে না।
এই বলে নিজেই হুট করে ফোনটা কেটে দিলো প্রিয়া। হাতের যে জায়গাটাতে কাঁচ ফুটেছে সেখানে হালকা রক্ত বেড়িয়েছে। রক্তটা চেপে রেখে একটু ডেটল দিয়ে জায়গাটা পরিষ্কার করে তাতে ব্যান্ডেড লাগিয়ে ঘর পরিষ্কার করতে শুরু করলো প্রিয়া। সব শেষ করে ঝাঁটাটা রাখতেই কলিং বেলটা বেজে উঠলো।
 গম্ভীর মুখে দরজাটা খুললো প্রিয়া। রিহানের মুখটাও গম্ভীর। ভেতরে চলে এলো সে। রিহানের হাতে একটা গিফট প্যাক। কিন্তু হাতে একটা এনভেলপও আছে। সেটা দেখে বুকটা ছ্যাঁত করে ওঠে প্রিয়ার। কদিন আগে একটা সিরিয়ালে সে দেখেছিলো যে বিবাহবার্ষিকীর দিন এমন একটা এনভেলপে নায়িকার হাতে নায়ক একটা ডিভোর্সের পেপার ধরিয়ে দিয়েছিলো। হ্যাঁ , আজ না হয় একটু বেশিই বলে ফেলেছে প্রিয়া, তাই বলে এটা?? না এটা হতে পারে না। করতে পারে না এটা রিহান!! কিছুতেই না। চোখের কোনা ছলছল করে ওঠে প্রিয়ার। মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকে প্রিয়া। গম্ভীর মুখে রিহান বলে, “নাও”। কোনো কথা না বলে রিহানের থেকে চোখ না সরিয়ে, এনভেলপের মুখটা খুলে বের করে আনে কাগজটা। কাগজটা তে চোখ নামাতেই প্রথমে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মাটিতে হাঁটু গেঁড়ে বসে হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকে প্রিয়া। কাগজটা তখন অনেকটা দুমড়ে মুচড়ে গেছে। মাটিতে বসে পড়ে রিহানও। হাটুতে ভর দিয়ে কিছুটা এগিয়ে আসে সে। প্রিয়ার মুখটা দুহাতে চেপে ধরে বলে, “কিচ্ছু হয়নি বাবু, এইতো আমি।। এই যে। ”। রিহানকে জড়িয়ে ধরে আরও জড়ে কাঁদতে থাকে প্রিয়া। রিহানের সাদা শার্টের কাঁধটা যেন প্রিয়ার সুনামীর সাক্ষী হয়ে থাকে। সারা গায়ে এতক্ষণে যে বৃষ্টি ভেজার চিনহ ছিল তার থেকে অনেক অনেক বেশি গাঢ় এই দাগ। প্রিয়াকে কোলে তুলে নিয়ে খাটে একটা বাচ্চার  মতো শুয়ে দেয় রিহান। কান্না তখন আর নেই। সাদা বালিশে মুখটা গুঁজে নেয় প্রিয়া। ওয়াশরুমে যেতে গিয়ে রিহান বলে,
-   কি?? আয়নাটা গেলো কোথায়?
বাচ্চাদের মতো, কিছু জানেনা, এমন একটা ভাব করে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে প্রিয়া।
রিহান আবার বলে,
-   ভেঙে ফেলিচো!! মা জননী? এরপর যে ফুড ডেলিভারি বয় আসবে তার মাথাটা ভেঙি ফেলাইয়ো না।
একটু চমক ভেঙে প্রিয়া বলে,
_ তাহলে আমি যা রান্না করলাম?
-   ওটা আমি খাবো, তোমার জন্য স্পেশাল কিছু আছে।
এই বলে ওয়াশরুমে পা বাড়ায় রিহান। প্রিয়া দেখে গিফটের গায়ে লেখা “তবু ভালোবাসি।”

ওহো, আপনারা তো এখনো যাননি, ভাবছেন কাগজটাতে কী লেখা ছিলো?
সত্যিই আপনারাও পারেন বটে, শান্তি দেবেন না দেখছি!! ওতে যা লেখাছিলো তার সারমর্ম হলো এটাই যে “প্রিয়া মা হতে চলেছে!!”।
বিশ্ব সমীক্ষা বলছে ভারতীয় সিরিয়ালগুলি মানুষের মধ্যে গৃহযুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টি করছে। তো এখনো বলছি ওগুলো দেখা বন্ধ করুন, নইলে ভারতকে মারতে কোনো আতঙ্কবাদীর দরকার নেই, একটা ‘ফাগুন বউ’ই কাফি।
ভালো থাকুন, রোদ্দুর গায়ে মাখুন। সিরিয়াল থেকে ঢের উপকারি।
সব লেখা পড়তে চলে যেতে পারেন আমার ব্লগে, diponlive.blogspot.com

বা আমাকে ইন্সটাগ্রামে ফলো করতে পারেন @dip_is_here এ। ভালো থাকুন, নমস্কার। 

Comments

Popular posts from this blog

ফিউসবক্স (Sequel of কলেজস্ট্রিট)

“ওম”

♥ ♥ ব্যারিকেড ♥ ♥