পিরিয়ডস










পিরিয়ডস
-   Dip Saha Chowdhury (রোদ্দুর)

ধড়মড় করে উঠলাম বিছানার উপর অনেকক্ষণ ছটফট করে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম খেয়াল নেই ঘুম ভাঙতেই তল পেটের যন্ত্রনাটা আবার যেন কামড়ে ধরলো ফোনটায় দেখলাম ইমনের অনেকগুলো মিসডকল ইসস, কখন যে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল করিনি আসলে সারাদিন ব্যাথায় ছটফট করেছি তাই হয়তো ঘুমটা খুব বেশি জাঁকিয়ে ধরেছিলো কিন্তু আমি উঠলাম কেন?? ওহ, হ্যাঁ মনে হলো কেউ যেন কলিংবেলটা বাজালো কিন্তু কটা বাজে?? ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম কাঁটা তখন ৩টের ঘর ছুঁই ছুঁই কিন্তু এতোরাতে কে আসবে?? ধুর ঘুমের ঘোরে কি শুনতে কি শুনেছি দেখলাম গলটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে গেলাসটার এক কোনায় কয়েকবিন্দু জল জমে আছে ঘামে ভিজে গেছে টপটা আস্তে আস্তে পা টা মাটিতে ফেললাম ব্যাথাটা একটু নিচের দিক থেকে টেনে উঠলো আমার মুখে তার ছাপ স্পষ্ট হয়ে দেখা দিলো আস্তে আস্তে পা বাড়ালাম ফ্রিজটার দিকে রান্নাঘর বলতে এই অল্প ছোটো ঘর আসলে 1 BHK একটা ফ্ল্যাট নিয়েছিলাম কলকাতায় কাজের সুবিধাতে একা থাকতে ভয় করতো প্রথম প্রথম এখন শিখে গেছি ফ্রিজটা খুলতেই কিছু ঠাণ্ডা
হাওয়া আর একটা চেনা আলো মুখ ছেয়ে গেল জলের বোতলটা সবে হাতে নিয়েছি এমন সময় কলিং বেলটা আবার বেজে উঠলো আমি ঠাণ্ডা বোতলটা চেপে ধরলাম কিন্তু মনে হলো যেন হাত পায়ের ভিতরটা আরো আরো ঠাণ্ডা হয়ে গেলো এতো রাতে কে?? যেন সব হরর মুভির সিনগুলো একে একে ভেসে উঠলো মনের দেওয়ালে আমি কি আবার ভুল শুনলাম নাহ এতো ভুল শোনে না কেউ দূরে রাস্তায় একটা কুকুর উঁচু স্বরে ডেকে উঠলো ঘরটা কেমন যেন গুমোট হয়ে আছে নিজের হৃদস্পন্দন নিজের কানের পর্দায় প্রতিফলিত হচ্ছে ব্যাথাটা কেমন যেন অনুভূত হচ্ছে না বোতলটা জলীয়বাস্পে ভিজে উঠছে ধীরে ধীরে কলিং বেলটা আবার বাজলো কিন্তু এবার পরপর অনেকবার আর পারছি না মনে হচ্ছে বুক ফেটে বেড়িয়ে আসবে কিছু কিন্তু আর ভয়টা নিতে পারছি না ডোর হোলে চোখ রাখলাম কাউকেই তো দেখা যাচ্ছে না নাহ কেউ নেই সামনের সিঁড়ির বেশ কয়েকটা দেখা যাচ্ছে আলোয় হঠাত দেখলাম সামনে একটা ছায়া নড়ে উঠলো গলার স্বরযন্ত্রটা বেশ দুবার ওঠা নামা করলো একটা ঠাণ্ডা ঘামের শ্রোত গলার উপরদিয়ে নেমে দুই স্তনের মাঝখান দিয়ে নাভিতে পরিসমাপ্তি ঘোষনা করল দেখলাম একটা ছায়ামুর্তি হুড পরে নেমে যাচ্ছে সিঁড়ি দিয়ে কিছুক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম আজ ইমন যদি থাকতো সম্বিত ফিরলো একটা টিকটিকির ডাকে নাহ এখন কেউ নেই ফিরে আসতে যাচ্ছিলাম এমন সময় একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম আমার দরজার নিচ দিয়ে একটা আলোর রেখা দেখা যায় কিন্তু আজ সেখানে কিছুটা জায়গা জুড়ে একটা ছায়া পড়েছে অর্থাৎ কিছু একটা রাখা হয়েছে সেখানে কি সেটা? দরজা খোলাটা কি ঠিক হবে? অনেক প্রশ্নের মাঝে উত্তর না পেয়ে শেষে হাতে একটা ছুঁড়ি নিয়ে লকটা খুলে দরজার নবটা ঘুরালাম আস্তে আস্তে দরজাটা খুলে এলো দেখলাম পায়ের কাছে একটা লাল বাক্স আর তার উপর একটা চিঠি বাক্সটা বেশ ঠাণ্ডা বাক্সটা পাশে রেখে উত্তেজনার বশে দরজা আটকে চিঠিটা খুললাম
প্রিয় রাগিনী,
দিনটা আজও স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে আলো দেয় তখন ক্লাস টেন এক ক্লাসের টিফিনের সময় আমায় আড়ালে নিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে খুব কেঁদেছিলি আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছিলাম জানতে চেয়েছিলাম কি হয়েছে বলেছিলি ওটা হয়েছে আমি বলেছিলাম কি?? আরে যেটা প্রতিমাসে হয়? আমি বোকার মতো বলেছিলাম তোর কি কোনো বড়ো রোগ হয়েছে?? বলেছিলি না আমার পিরিয়ডস হয়েছে? আমি বোকার মতো বলেছিলাম সেটা কি? তখন ব্যাথায় ছটফট করতে করতে বলেছিলি আমার ব্যাথা করছে তখন যেই বলেছিলাম চল হসপিটাল নিয়ে যাই তুই রাগে, কষ্টে চড় মেরে উঠে গিয়ে লাস্ট বেঞ্চে বসে কেঁদেছিলি সারাদিন বসেছিলি একভাবে কথা বলিস নি পরেরদিন আমি যখন চুপ করে মাঠের একপাশে বসেছিলাম তুই টিফিনটা এনে ভাগ করে খেতে খেতে সব বুঝিয়েছিলি আমি হাঁ করে শুনেছিলাম তার পরে কেটে গেছে অনেক বছর প্রতিমাসে তোকে ছটফট করতে দেখেছি কষ্ট পেয়েছি অনেক নিজেও আমার কাঁধে মাথা রেখে ভিজিয়েছিস আমার কাঁধ আজও ঐ ব্যাথার পরিমাপ হয়না অন্তত তার পরিমাপ আমার দ্বারা সম্ভব নয় শুধু এইটুকু বুঝি যে এটা এমন এক অভিশাপ যা ফিরে আসে বারবার একবার হয়ে যখন ভুলে যেতে শুরু করিস, ভাবিস এবার বাঁচলাম কিন্তু আবার পরের মাসে হানা দেয় অন্তগহ্বরে ভুলতে চাইলেও ভুলতে দেয়না যে তোরা পুরুষদের সমান প্রতিমাসের এযুদ্ধে তোরা ক্লান্ত হওয়ার অবকাশ পাস না হয়তো এব্যাথা আমি নিতে পারবনা কোনোদিনই কিন্তু একটু আনন্দ দিতেই পারি একটা আইসক্রিম আনলাম তোর ফেভারিট ফ্লেভারটা খেয়ে নিস নাহ তোর সামনে দাঁড়ানোর ক্ষমতা আমার নেই কারন তোরা আমাদের থেকে এবিষয়ে এগিয়ে নিজেদের পরাজয় মেনে নিতে একটু খারাপ লাগবে কিন্তু সবসময় পাশে আছি
ইতি
-   ইমন
চিঠিটা পড়তে পড়তে কখন দুচোখ জলে ভেসে গেছে জানিনা ছুটে গেলাম ব্যাল্কনির দিকে দেখলাম একটা ছায়ামুর্তি ফ্লায়িং কিস ছুঁড়ে শিস দিতে দিতে এগিয়ে গেল স্ট্রিটলাইটের দিকে মনে মনে বললাম “পাগল একটা...” আইস্ক্রিমটা নিয়ে তখন আবার ব্যাল্কনিতে এসে দাঁড়ালাম ব্যাথাটা বেড়েছে ঠিক কিন্তু কেমন যেন ভালোলাগা জড়িয়ে গেছে তাতে আইসক্রিমটা মুখে দিতেই শরতের একফালি ঠাণ্ডা বাতাস আমার মুখ আর চুলের মাঝে বন্দি হল... মোবাইলের স্ক্রিনে তখন ভেসে আছে একটা ম্যাসেজ With Love From Imon… 😉

Comments

Popular posts from this blog

ফিউসবক্স (Sequel of কলেজস্ট্রিট)

“ওম”

♥ ♥ ব্যারিকেড ♥ ♥