ল্যাপটপ





ল্যাপটপ
-   Dip Saha Chowdhury ( #রোদ্দুর )
“Love is the only thing, always pure in you”

“কিছু ভাবলে আমায় নিয়ে??” ল্যাপটপের উইন্ডোর ওপাশ থেকে ভেসে এলো শব্দটা। চেনা শব্দটা শুনে কিবোর্ডে টাইপিং এর গতি ক্ষানিক ধীর হল রনিতের।আস্তে আস্তে উইন্ডোটা নামিয়ে নিলো কিবোর্ডের কাছে। মনিটারে যে  জোরালো আলোটা জ্বলছিলো আধারে ভরে গেলো তা মুহূর্তের মধ্যে। ল্যাপটপের ওপারে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সোহিনী। চারপাশটা একবার দেখে নিলো রনিত। না এই বৃষ্টি বাদলার দিনে কেউ আড় কলেজমুখো হওয়ার সাহস করেনি। ক্যান্টিনে গুটিকতক ছেলে মেয়ে। ঐদিকের ধারটায় একটা কপোল হাতে হাত রেখে বাইরের অবিরত বর্ষাকে নিজের মধ্যে আলিঙ্গন করছে। কিছুটা গলা খাকড়ানি দিয়ে রনিত একটা সিগারেট ধরিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলল, “নাহ... তেমন কিছু না”। কথাটা শুনে মুখ কাচুমুচু হয়ে গেলো সোহিনীর। নিজের থেকে ৩-৪ বছরের ছোটো ছেলে নাকি মুখের উপর বলে “না??” । এ দিনটাও দেখতে হল সোহিনী?? কিন্তু কথায় বলে ভালোবাসা কিছুই জানে না। কি আর করার। ক্রাশের ইচ্ছেই শিরোধার্য্য। “এক তারফা প্যার কি তাকাত... ধুরররর...”। কে যে এই প্রেম – ভালোবাসা তৈরি করেছিলো কে জানে? ছোটবেলা থেকে শারুখকেই নিজের ধ্যান গ্যান মনে করেছিলো সোহিনী... আর বারেবারে শারুখের মুভি দেখে ইন্সপায়ার হয়ে প্রেমে পড়ে লাস্টে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। নাহ এবার আটঘাট বেঁধে এসেছে সোহিনী। এই মালটার গালে টোল পড়ে... আর তা দেখেই ক্লাসরুমে প্রথম প্রেমে পড়ে সোহিনী।। কিন্তু এতো পর্যন্ত গল্পটা ঠিকই ছিলো বুঝলেন কিনা... কিন্তু ঐ যে প্রেমের দেবতা মদন-মোহন এসে সব কিছু ঘেঁটে অ-ঘ সব বানিয়ে দিলো। তবে গল্পটা বলি... বেশ কিছুদিন আগের কথা। ক্লাস নিতে যে রুমটায় ঢুকলো সোহিনী... তার দরজার উপর লেখা “তৃতীয় বর্ষ – বাংলা।” জমজমাট ক্লাস... একপাশে ছেলে, একপাশে মেয়ে কিন্তু শেষের দিকে কয়েকটা ছেলে মেয়ে পাশাপাশি বসেছে। এমন নয় যে বেঞ্চ নেই। কিন্তু ঐ যে সবই কানাইয়ের লীলা... সে রাম-লীলার দীপিকা হোক বা এক প্যাহেলী লীলার সানি লিওন... প্রেম সর্বত্র গতিময়। নিজের ফিগার নিয়ে চিরকালই গর্ব ছিলো সোহিনীর। সে ভাবে যে ছেলে তারদিকে তাকায় না সে গেরুপী সমকামী... তো ক্লাসে ঢুকেও তার কোনো ব্যাতিক্রম হল না। ছেলেদের চোখে দুষ্টুমি আর মেয়েদের মনে কানাঘুষো। রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতা এর একটা পাতা পরে বলল, “যে পক্ষের দখলে শিকল আছে সে শিকল দিয়েই পাখিকে বাঁধে, অর্থাৎ জোর দিয়ে…” থামল সোহিনী, দেখল সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে কেউ পড়া শুনে, কেউ শোনার ভান করে, কিন্তু একটা ছেলে জানলা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।বেশ রাগ হল সোহিনীর। চেঁচিয়ে বলল, “Hey You.. Blue Shirt.” থতমত খেয়ে উত্তর দেবে এমনটাই ভেবেছিলো সোহিনী। কিন্তু ছেলেটা বেশ শান্ত ভাবেই উঠে দাঁড়ালো সে। বলল, আমি আপনার কথাই শুনছিলাম। আসলে আমি ভাবছিলাম যে আচ্ছা রবীন্দ্রনাথ আসলে কাকে ভালোবাসতেন ?? অমিত – লাবন্য- কেডি- কাকে?
যদি ধরে নিই লাবন্যকে তাহলেও কেডিকে আনার কি দরকার। ওর তো মন আছে, নিজের সৃষ্টিকে কেউ কি কষ্ট দিতে পারে?? কথাটা শুনে বেশ কিছুক্ষন চুপ হয়ে থাকে সোহিনী। একটা উপন্যাসকে কেউ এতোটা গভীর থেকে পড়তে পারে কি কেউ? আচ্ছা এটা কেন মনে হচ্ছে যে অমিত হয়তো মলাট ছেড়ে বেরিয়ে আমার সামনে এসে রবীন্রনাথের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ঘোষণা করছে। এতোদিন অমিত যে ভাবনা বুকে ছাইয়ে চেপে রেখেছিলো তাই যেন ভেসে এলো এই ছেলেটার গলায়। অজান্তেই সোহিনী বলে উঠলো ‘নামটা?’। কিছুটা হেসে সে বলল, “রনিত”। হাসার সময় খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির ফাঁকে টোলটা ঠিক দেখতে পেল সোহিনী। মনে এক অদ্ভুত ভালোলাগা জন্মালো। ঠিক যেমন প্রথম প্রেমে পড়ার সময় হয়েছিলো। ঢংঢং করে বাজলো ক্লাস শেষের ঘন্টা। বইটা হাতে নিতে নিতে বারবার আড়চোখে তাকালো সোহিনী। যেন সে চাইছে না। আর চোখ মানছে না।
দুদিন পর কলেজ ক্যান্টিনে একজন কলিগের সাথে বসে কফি খাচ্ছে সোহিনী। জমজমাট ক্যান্টিন। হঠাত কোনো কোন থেকে একটা গিটারের সুর ভেসে এলো সেই সঙ্গে পুরো কোলাহল নিস্তব্ধ। কেউ একজন একটা ইংলিশ গান ধরেছে। একটু কান পেতে শুনলো সোহিনী। “Well you only need the light when it's burning low
Only miss the sun when it starts to snow
Only know you love her when you let her go..
” হুম ঠিক চিনেছে সোহিনী তার অন্যতম খুব পছন্দের গান let her go.. – passenger। একটু উঠে দাঁড়ালো সোহিনী। আরে এতো সেই ছেলেটা ... রনিত।। ধীরে ধীরে যেন সে তার পুরো স্বত্বাটাকে গ্রাস করছে। প্রেমে পড়ে গেছে সোহিনী, এক নিশিদ্ধ্ব প্রেম। পাশের একজনকে বলল তাকে চেনে নাকি ভাগ্যক্রমে নামটা জানতে পারলো সে। আড় দাঁড়ালো না সোহিনী ছুটে বেরিয়ে এলো সে ধীর ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো ওয়াশরুম এর দিকে। দরজাটা বন্ধ করে। জিন্স থেকে বের করে আনলো মোবাইলটা। ফেসবুকটা খুলে সার্চ করলো “রনিত চক্রবর্তী”। খুঁজে পেতে অসুবিধা হল না। উত্তেজনাতেই ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট চলে গেলো। ম্যাসেঞ্জারটা খুলে চটপট লিখে ফেলল সোহিনী। “হাই হ্যালো বলার সুযোগ নেই, আশাও রাখিনা। শুধু বলতে চাই ভালোবেসে ফেলেছি অজান্তেই। বয়েসের কথাটা না হয় উহ্যই থাক... আমি ভাবি না... তুমিও ভেবো না... কারন প্রেমিকদের বয়েস নিয়ে আলোচোনা করা নিশিদ্ধ্ব... আমার আমিটাকে তোমার মধ্যে খুঁজে পেয়েছি... হারিয়ে যেতে দিয়ো না... আমার কথা মনে রেখো... ভেবে দেখো... ইতি – অমিতের কেডি”।
সন্ধ্যেবেলা নিজের বিছানায় শুয়ে নোটিফিকেশন এলো। “Ronit Chakroborty has accepted your friend request…. ” তারই সাথে ম্যাসেঞ্জারে একটা নোটিফিকেশন “হুম ভেবে দেখবো...” আর কিছু রিপ্লাই করেনি সোহিনী... নিজের যত্নের টেডিটাকে জোরে চেপে ধরেছে সোহিনী। কিছুক্ষন পরপর শুধু লাস্ট সিন চেক করেছে সে। নাহ সেই ২ ঘন্টা, ৩ ঘন্টা করে এগিয়ে চলেছে লাস্ট সিনটা। সবুজ রঙ ছোঁইয়নি তাতে। রাত দুটোর সময় হঠাত ফোনটা কেঁপে উঠলো। ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজ এলো দিনটা তোমার হোক লাবন্য। তবে ম্যাসেজটা তখন পড়েনি লাবন্য। ভোরবেলা ঘুম ভেঙ্গে পড়েছে সে, বাইরে তখন অঝোরে বৃষ্টি... অন্যদিন হলে হয়তো ভারমে যায়ে কলেজ। কিন্তু আজ তার উল্টোটা হল, ছাতা নিয়েই বেরোলো সে। একটা বাস ধরে কলেজে এসে ক্লাস বন্ধ শুনে মনখারাপ করে ফিরতে যাচ্ছিলো সে। ক্যান্টিনে রনিতকে চোখে পড়লো তার। ল্যাপটপে কিছু একটা লিখছিলো।


সিগারেটটা অর্ধেক শেষ করে কিপ্যাডটা আবার চলল, পড়ে থাকা জলের প্রতিচ্ছবিতে একটা লেখা উলটো ভাবে চোখে পড়লো সোহিনীর। “কি চলুন বাড়ি যেতে হবে তো।”
ল্যাপটপটা বন্ধ করে , ব্যাগে ঢুকিয়ে উঠে পড়লো রনিত। দরজার কাছে গিয়ে আরমোড়া ভাঙল সে। তারপর পিছন ঘুরে বলল, “কি চলুন বাড়ি যেতে হবে তো।”, “ছাতা এনেছেন...”। ছাতা এনেছে সোহিনী। কিন্তু বলল, “একদম ভুলে গেছি...” আসুন আমার ছাতায় হয়ে যাবে ঠিক... আর দেরি করলো না সোহিনী, বৃষ্টিতে নামলো ওরা দুজন। তখনও পরে আছে ছাতাটা ক্যান্টিনের এক কোনায়।   

Comments

Popular posts from this blog

ফিউসবক্স (Sequel of কলেজস্ট্রিট)

“ওম”

♥ ♥ ব্যারিকেড ♥ ♥