“অনির বসন্ত”

 

 

 

“অনির বসন্ত”


-   Dip Saha Chowdhury

(#রোদ্দুর)


এ গল্পের শুরু অনেকেরই জানা, যারা জানেন নি তাদের জন্য আগের পর্ব অবয়সী এখনো রাতের আকাশে নক্ষত্রদের মত আপনাকে হাতছানি দিচ্ছে। পারলে আরেকবার ঘুরে আসতে পারেন। এক শীতের সকালে রোদ্দুরের উত্তাপ মেখে যে ভালোবাসা শুরু হয়েছিলো তার এক নতুন আঙ্গিনা আপনাদের দেখাব। তার আগে একটা কথা যেনে রাখবেন ভালোবাসা চিরকালই আপনাকে সাহসী করে, সময়ের চোখে চোখ রেখে বুঝিয়ে দেয় যে সে না থাকলে সময়ের অস্তিত্বও হয়তো মরু প্রান্তরে থমকে যেত। ততদিনে রুপমের মাধ্যমিক শেষ হয়েছে। অনিন্দিতার প্রতি তার টানটাও বেড়েছে দিনে দিনে। এর মধ্যে তারা একবার সিনেমাতেও গেছে একসাথে। কিন্তু ভাগ্যিস টিকিটরক্ষক রুপমকে তার বয়েস জিজ্ঞাসা করেনি। না এ কারনে না যে তার বয়েস এখনো ১৮ পেরয়নি বরং তার বান্ধবী সে যে তার থেকে প্রায় ১৮ মাসের বড় একথা শুনলে তাকে মাটির তলায় ঢুকে যেতে হত। অনিন্দিতা অবশ্য এবারে খুব একটা পাত্তা দেয়নি। লোকে কি বলল তাতে থোরি না কিছু হবে। ভালোবেসেছে সে তার থেকে বয়েসে ছোট রুপমকে তাতে কার বা কি গেল? কিন্তু রুপম এখনো অতটা ম্যাচিওর নয়, বা হয়তো ভয় পায় অনিন্দিতাকে তাই হয়তো মনে ভালোবাসা থাকলেও কখনো অনিন্দিতাকে প্রোপোজ করেনি রুপম। সেটা বুঝেছে অনিন্দিতা। তাই কখনো জোর করেনি অনিন্দিতা। কেনই বা জোর করবে সে? ভালোবাসা কি ঐ হাঁটু গেঁড়ে , ফুল দিয়েই হয়? ওটা শুধু উপলব্ধিতেই হয়। সব প্রেম এসির মধ্যে ওঠা কফির বাস্পে মিশে যায় না। কিছু প্রেম তো ফুচকার তেঁতুল জলেও হয় নাকি? এই ধরুন কেউ আপনাকে অবাক করে নিজেই হাতে করে ফুচকাটা আপনার মুখে পুরে দিলো... পাবেন এই অনুভুতিটা ক্যাপেচুনোতে??

দুজনেরই ছুটি চলছে। পরীক্ষার শেষ মানে তাদের বিরহের পালা। রুপম হয়তো মাধ্যমিক দিয়ে ক্লাস ১১ এ একই স্কুলে থাকবে। বিদায় নেবে অনিন্দিতা। কারন তাকে তো কলেজে যেতে হবে। রুপম আর হয়তো প্রতিদিন দেখাও পাবে না অনির। শেষ যেদিন তাদের রোল ডাকা হয় সেদিন সারা ক্লাস গুম হয়ে বসেছিলো রুপম। আর তো প্রতিদিন দেখা হবে না তাদের। ধুলো পড়া ঐ রেজিস্টারের মতো তাদের ভালোবাসাও ঘরের এক কোনে পড়ে থাকবে না তো?? বিকালে স্কুল ছুটির পর দেখা হয়েছিলো তাদের অনিকে জড়িয়ে ধরেছিলো রুপম। হঠাত অনি খেয়াল করলো কাঁধটা ভেসে যাচ্ছে তার। গরম জল যেন কোনো অজানা উত্তাপকে কাঁধের উপর জানান দিয়ে যাচ্ছে এ কাঁধেই তার দায়িত্ব নিতে হবে অনির। রুপমকে নিজের মতো করে গড়ে তুলতে হবে।  সেদিন চোখ লাল হয়েছিলো অনিরও শুধু চোখকে এক্টাই কথা বলেছিলো – “এখন কাঁদিস না, দুর্বল করিস না। এই ছেলেটা তোর দিকেই তাকিয়ে বিশ্ব খুঁজে পায়।” বুক থেকে সরিয়ে অনেক বুঝিয়েছিলো অনি। কী রকম যেন দিদি টাইপ্স হয়ে গেছে অনি। কিন্তু তাকে তো মায়ের মতো যত্ন করতে হবে রুপমকে। অনেক বুঝিয়ে সেদিন বাড়ি পাঠিয়েছিলো রুপমকে। তারপর প্রায় উলসন বোল্টের চেয়েও বেশি গতিতে ২.৫ কিমি রাস্তা মাত্র ১৫ মিনিটে দৌরে ব্রি ফিরেছিলো অনি। ঘরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে হাউহাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বিছানায় বসে পড়লো। তার ব্রন ভরা গালের গা বেয়ে তখন অঝোরে বৃষ্টি নামছে।

 

তখন মে মাসের শুরু। কাল রাতে একটা নিন্মচাপ সৃষ্টি হয়েছে এবং তার জেরে রাত থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। হাতে কফির মগটা নিয়ে বাইরে দাঁড়ালো রুপম। কাল রাতে অনেক্ষন চ্যাট হয়েছে তাদের। তাই মহারানী হয়তো এখনো ঘুমাচ্ছেন। খবরের কাগজটা তুলে নিলো রুপম। বৃষ্টির ছাঁট এসে তার উপর ভেজা ভেজা একটা আস্তরন পড়েছে। রবিবাসরীয়র একটা পাতা উল্টাতেই দেখল তাতে একটা গল্প ছাপা হয়েছে। নামটা বেশ ভালো “অনির বসন্ত” নামটা দেখেই হারিয়ে গেল রুপমের মন। জীবনের একটা বসন্ত সত্যিই বসন্তের মতো উপলব্ধি করেছে রুপম। একদিন বসন্তের বিকেলে পার্কে নিয়ে গিয়ে এক গাছের আড়ালে বসেছিলো অনি-রুপম। অনি বলল, “কি স্যার আজকে বাড়িতে পরোটা হল??” রুপম কাচুমুচু মখ করে বলল, “না... ” তারপর বলল “বা*” অনি ভ্রু উঁচিয়ে বলল, “ও.. এসব ও হয়।” নিজের ভুলটা বুঝতে পেরে মাথা নিচু করে বসে থাকে রুপম। অনি তাতিয়ে দেওয়ার জন্য বলল, “তা বাবু কোথাকার বা*?” রুপম সেই মুখ নামিয়ে বসে থাকে। সেই দেখে মুচকি হাসে অনি। ব্যাগের ভিতর থেকে একটা টিফিনকারি বের করে আনে অনি। টিফিনকারি খুলতেই রুপমের চোখে পরে তাতে রয়েছে পরোটা আর আলুর তরকারি। অনির দিকে তাকিয়ে ছলছল করে ওঠে রুপমের চোখ কিছু বলতে পারে না সে। কথাগুলি যেন আবেগে থমকে গেছে। কণ্ঠস্বর ডিকশেনারির ভাষায় হয়েছে প্যারালাইসড। নিজের হাতেই খাইয়ে দেয় অনি। রুপমও আপত্তি করেনি। বিকেলের ঘাসে ঘন হয় তাদের ছায়া। সুর্‍্য তখন পশ্চিম আকাশে নিজের ঘরে ফেরার তারা নিচ্ছে। দূরে তখন একটা ট্রেন ছাড়ার হর্ন দিয়ে শব্দে মিলিয়ে গেল।

মার্চ মাসের তখন মাঝামাঝি অনি আর অনির ফ্যামিলি দীঘাতে যাওয়ার প্ল্যান করেছে। কাল বিকেলেই রওনা হবে তারা। তার আগে অনি বলেছে অনি রুপম সিনেমাতে যাবে। টিকিট অনিই বুক করবে। কথা মত, বাড়িতে বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছে বলে বের হয় রুপম। বিকালে সেখানেই খাবে এ অজুহাত ও দেয় সে। হলে যখন পৌছালো রুপম তখন হলের সামনে প্রায় ফাঁকা, গুটিকতক লোক দাঁড়িয়ে আছে এদিক ওদিক। তাকে এদিক ওদিক তাকাতে দেখে একজন লোক এগিয়ে এলো। আরে এতো সেই টিকিটওয়ালা, কর্কশ গলায় বলল, “বান্ধবীকে খুঁজছো??” কিছুটা আমতা আমতা করে রুপম বলল, “মানে... হ্যাঁ... ” লোকটি হেসে বলল, নাও টিকিটটা হাতে দিয়ে বলল, “যাও ভিতরে যাও, সে ভিতরেই আছে”। ভিতরে গিয়ে সে দেখলো। কাপল সিটের একটাতে বসে আছে অনি। তাকেও হাত নাড়িয়ে ডাকল সে। উঠে গিয়ে বস্তেই দেখলো। সেখানে আরো অনেকে আছে। তবে সিটগুলো পার্সোনাল। অর্থাৎ একটা কাপল আরেকজনকে দেখতে পারবে না। সিনেমা শুরু হল। সাথে পাশের সিটের থেকে কেমন শব্দ ভেসে আসছে।এ শব্দ সে চেনে। খুব চেনা শব্দ, ঐ যে পর্ন ছবিতে সে শুনেছে। উত্তেজনার বশে পাশের সিটের উপর উঁকি দিতে যাচ্ছিল রুপম অমনি অনি হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিলো... “আরে... মারবে নাকি।” ওদেরটা ওদের বুঝতে দাও। নামতে গিয়ে রুপমের হাত গেল অনির বুকের উপর। তক্ষনাত ভয়ে হাত সরিয়ে নিলো রুপম। অনি হাতটা টেনে ধরলো, অনি খেয়াল করলো যে রুপমের হাতটা ঠাণ্ডা হয়ে আছে। হাতটা জোরে বুকের উপর আনলো অনি। না এখন আর সরাচ্ছে না রুপম। তার উত্তেজনা মেশানো ভয় কেটেছে। নিজেকে সামলে নিয়েছে আসতে আসতে  কখন যে  তাদের ঠোঁট একে অপরের কাছে এসেছে বোঝেনি কেউই। রুপমের কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে কখন যে অনির অধিকার জন্মেছে তা জানান দেয়নি তাদের ভালোবাসা। এক বিদ্যুৎ খেলে গেল। প্রথম প্রেমের প্রথম ছোঁয়া।সিনেমার অন্ধকারে সেদিন বেড়ে উঠতে শুরু করে ভালোবাসার নতুন অধায় প্রাচীন পাণ্ডুলিপির ছোঁয়ায়।

পরেরদিন রুপমকে জড়িয়ে ধরে বিদায় জানায় অনি। তিনদিন তাদের আলাদা থাকতে হবে। অনির এলোমেলো চুলে হাত বুলিয়ে অনি শুধু এক্টাই কথা বলে “সাবধানে যেও। আর ভালো থেকো ভালোবাসা...” নিজেকে সামলে নেয় অনি। হাত ছাড়িয়ে উঠতে যাবে এমন সময় রুপম কপালে একটা চুমু দেয়। জানিয়ে দেয় সাথে থাকবে সারাজীবন। অনি শুধু তার চোখে তাকিয়ে বোঝে ম্যাচিওর হচ্ছে রুপম, তার ভালোবাসাও তার সাথে ...।

 

সারাদিন হইহুল্লোরে কেটে গেছে অনির। তাই সন্ধেটায় বালুচরে এককোণে বসে রুপমের কথাই ভাবছিলো অনি। বুকের ভেতর তোলপার হচ্ছে। হঠাত কে যেন হাতের উপর হাতটা রাখলো। পিছনে ফিরে অনি বলল, “তুমি এখানে?” নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছে না অনির। রুপম বলল, “একটা প্রশ্ন, কলেজে গিয়ে বদলে যাবে না তো।” অনি হা করে তাকিয়ে অজান্তেই উত্তর দিলো, “তোমায় বদলাতে এসেছি, ভালোবাসাটাকে না...” আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো অনি। রুপম ঠোঁটে হাত রেখে বলল, “চুপ... আচ্ছা এখানে ঝাউ গাছের বনটা কোনদিকে?? ” অনি মিথ্যে রাগ মেশানো গলায় বলে, “কেন??...” রুপম বলে “আজ জিনে কা তামান্না হ্যা, আজ মারনেকা ইরাদা হ্যা...” দুজোনের চোখেই দুষ্টুমি খেলে যায়। যেন বহ্নিপতঙ্গ আগুনের সন্ধান পেয়েছে। গ্রীষ্মের মাঝে এ এক বসন্ত। অনির বসন্ত।

 

 

Comments

Popular posts from this blog

ফিউসবক্স (Sequel of কলেজস্ট্রিট)

“ওম”

♥ ♥ ব্যারিকেড ♥ ♥