শিব-রাত্রি


 


 শিব-রাত্রি

 -Dip Saha Chowdhury(#রোদ্দুর)


জীবন প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তনশীল তথা গতিশীল আর এই পরিবর্তনশীল জীবনে ভালোবাসা এমন এক রসদ যা জীবনকে প্রতি কোনায় এগিয়ে চলার প্রেরনা দেয়। জাপানের মাউন্ট ফুজির পাদদেশে একটি জঙ্গল আছে যার নাম আওকিগাহারা।যদি কখনও গুগুলে সার্চ করেন এই নামটি তবে অবশ্য গুগুল কিছু অন্য উত্তরই দেবে। পৃথিবীতে সবছে বেশি আত্মহত্যার জায়গা এই আওকিগাহারা। যারা এখান থেকে ফিরে এসেছে তারা বলেছে যে, এই জঙ্গলটি অন্য জঙ্গলের মতই অনেকটা কিন্তু এর মধ্যে শুধু কোথাও ভালোবাসার ছোঁয়াটা নেই। মানুষের মধ্যে বাঁচার ইচ্ছে হারিয়ে যায় এখানে এলে। কিন্তু আদতে কেন এটা হয় তা আজও কেউ আবিস্কার করতে পারে নি। আসল উত্তর কিন্তু অন্যরকম। ঐ যে ভালোবাসা নেই তাই মৃত্যু ওখানে শাস্তি না প্রার্থনা। যেখানে ভালোবাসা নেই সেখানে মানুষ বাঁচার কারন থাকে না। আমার জীবনেও রাগিনীও সেই ভালোবাসা যে আমাকে বাঁচতে শিখিয়েছে।
কাল রাতে চুপি চুপি রাগিনীর ঘরে ধুকেছিলাম। কীই বা করতাম? খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো তাই ঢুকে পড়েছিলামসেটা অবশ্য একটা বিড়াল ছাড়া আর কেও জানতে পারে নি। প্রতিহত করার চেষ্টাও করেছিলো “মিয়াঁও” বলে কিন্তু সেটা ওর ঘুম ভাঙ্গাতে অক্ষম ছিলো, সেটাই বাঁচোয়া। সত্যি ও ঘুমালে ওর মুখটা খুব মায়াবি লাগে।মনে হয় যেন কেউ আকাশের তারাগুলি পায়ের নিচে নামিয়ে এনেছে। কপালে একটা চুমু এঁকে চুপি চুপি বেরিয়ে এলাম।
সকাল ৭টাঃ
সকাল সকাল ফোনটা বেজে উঠলো, - “রাগিনী”
ঘুম জড়ানো গলায় বললাম,
-হ্যালো।
- কাল রাতে কোথায় ছিলি?
ভয়ে... আমতা আমতা করতে করতে বললাম,
-   কো...কোথা... কোথায়... ?? কোথাও না।
-   একদম ঢপ দিবি না।তোর হ্যান্ডব্যান্ডের একটা পুথি আমার ঘরে পেয়েছি। কাল রাতে আমার ঘরে ঢুকেছিলি??
হাতরে দেখলাম সত্যি একটা পুথি নেই।। বললাম,
-   সরি
-   কেন ঢুকেছিলি?
-   না মানে দেখতে খুব ইচ্ছে করছিলো তাই আরকি...
-   তোর লজ্জা করে না রাতে একটা মেয়ের ঘরে ঢুকতে??
-   ওটা তো আমারই...
-   সে , তোর অনেক কিছুই আমারই।। তাহলে রাস্তায় ধরবো??
-   এই ছিঃ ... এসব কি বলছিস... সকালবেলা ঠাকুরের নাম নিতে হয়... রাম রাম।
-   তুই কোনো কথা বলবি না। রাখলাম... আমার অনেক কাজ আছে...
-   কি কাজ??
-   আজ শিবরাত্রি ... অনেক কাজ।
-   আরে শিবতো পেয়েই গেছিস। আবার এসবের কি দরকার?
-   কে শিব?
-   কেন আমি...
-   ভুল ধারনা নিয়ে বাঁচা ঠিক না। যে শিব হয় সে চোরের মতো ঘরে ঢোকে না।
-   তুই যে চোরের মতো মনে ঢুকেছিলি?
-   বা***, ঢং করবি না... সকাল সকাল ঢং। কাল রাতে কি মতলব ছিলো তোর?
-   আরে বিশ্বাস কর কোনো খারাপ মতলব ছিলো না।
-   তোকে বিশ্বাস?? এরপর থেকে উত্তরের জানলা দিয়ে শোবো। কি জানি কখন বাঁদর ঢুকে পরে।
-   আমি বাঁদর??
-   বললাম না ভুল ধারনা নিয়ে বাঁচা উছিত না?
-   মানে?
-   তুই হনুমান...
বলে ফোনটা কেটে দিলো... তারপর অনেকবার ফোন করলাম। কিন্তু কলার টিউন ছাড়া ভালো কিছু জুটলো না।
সারাদিন ফোনের দিকে তাকিয়ে কেটে গেল... মোবাইলে কোম্পানির ম্যাসেজ ছাড়া আর কিছু এলো না। ওর কি এতই রাগ যে। একটা ফোন করার প্রয়োজন মনে করে না। ফোনটা ছুড়ে ফেলে দিলাম শেষে... কখন যে ঘুম এসেছে খেয়াল নেই। ফোনে এসএমএস আসার শব্দে ঘুমটা ভাঙল, রাগিণীর এসএমএস তবে ফাঁকা না এরকম ভাবে হবে না...। কি ভাবে নিজেকে... এখন তো জল ঢালার লাইনে থাকার কথা। গায়ে একটা শার্ট দিয়ে বারমুন্ডা পরেই বেড়িয়ে পড়লাম। যখন মন্দিরের সামনে গিয়ে পড়লাম। দেখলাম প্রচণ্ড ভিড়... অনেক মামনি এসেছে... না কন্সেন্ট্রেট। একটু ভিতরে যেতেই দেখলাম রাগিনী, উফফ কি দেখতে লাগছে... লাল পাড়ের শাড়ি, হাল্কা লিপ্সটিক কিন্তু না ইমন... ফোকাস... উনি একটা মেয়ের সাথে গল্প করছে। আমাকে দেখে যেন আকাশ থেকে পড়লো। আমার বারমুন্ডা দেখে ওর কটমট করে তাকিয়ে রইলো যেন এক পলকেই ভস্ম করে দেবে, আমি অতো কিছু না ভেবে বললাম,
-   নিজেকে কি ভাবিস?
ও শান্ত ভাবে বলল,
-   বাড়ি যা
কথাটা শান্ত অথচ দুরন্ত । অনেকটা ঝড়ের আগের পরিবেশের মতো মনে হল,
বললাম,
-   আমি হনুমান!
পাশ থেকে একজন বলল,
-   সেক্সি হনু
রাগিনী অমনি আমাকে সরিয়ে দিয়ে বলল,
-   কে বললি... বেড়িয়ে আয়। বেরো... বেরো...
দেখলাম রাগিনী রাগে কাঁপছেবুঝলাম অবস্থা সুবিধার নয় বললাম,
-   শান্ত হ! তুই না ভালো মেয়ে।
ও রাগের চোখ নিয়ে বলল,
-   তুই বাড়ি যা
-   যাবো না।
-   যা বলছি। লোকে তাকাচ্ছে
-   তাকাক...
-   তোর দিকে।
-   ও ঠিক আছে। আমি এমন কেও না।
-   শেষবার বলছি, বাড়ি যা...
-   তুই কখন যাবি??
-   বাড়ি যা...
-   আগে...
কথা শেষ করতে পারিনি, পুরো ঘটির জলটা আমার মাথায় ঢেলে দিলো... মন্দির চত্বরে এক অসম্ভব নীরবতা নেমে এলো সেই সবের পাত্তা না দিয়ে রাগিনী গটগট করে বেরিয়ে গেলো এমন ভাব যেন ডন বেরোচ্ছে আমিও মাথা নিচু করে চলে এলাম আসতে আসতে দেখলাম এক কাকিমা রাগিনীকে জিজ্ঞাসা করছেন যে, “পুজো হলো...”
আমার দিকে আর চোখে তাকিয়ে ও উত্তর দিলো,
“একদম... সেরা পুজো...”
আমার দিকে এগিয়ে এসে রাগিনী একটা বাচ্চাদের মতো হাসতে হাসতে বলল  এদিক আয়... আমি রাগ করে যেতে গেলাম হাত ধরে টেনে এনে আঁচল দিয়ে মাথা মুছাতে লাগলো... গদগদ স্বরে বলল, এবার হবে “শিব সেবা”

Comments

Popular posts from this blog

ফিউসবক্স (Sequel of কলেজস্ট্রিট)

“ওম”

♥ ♥ ব্যারিকেড ♥ ♥