রাগিনীর ডাইরি







রাগিনীর ডাইরি


-Dip Saha Chowdhury(#রোদ্দুর)

“তারা সত্যিই ভাগ্যবান যারা জীবনে অন্তত একবার সত্যিকারের ভালোবাসার ছোঁয়া পেয়েছে। ভালোবাসা হল সেই শক্তি যা গাছে ফুল ফোটায়, অন্ধকার আকাশের এক কোনে চাঁদ উঠিয়ে রাতকে আরো রাতময় করে তোলে।”
কাল রাতের সিদ্ধান্তটা প্রথমে ভুলই মনে হয়েছিল, কিন্তু চিরকালই জানিনা কেন ইমন আমার সব ভুলগুলিকে প্রশ্রয় দিয়ে ঠিক পথ খুঁজে দিয়েছে। আগেরদিন ভোর রাতে অফিসের কাজে দিল্লি এসেছি। যদিও আমার উপায় ছিলো না। জন্মদিনে এইভাবে শহরের বাইরে থাকাটা শাস্তি ছাড়া কিছু না। চেয়েছিলাম দিনটা পরিবারের সাথে কাটুক। ইমনকে ঘিরে কাটুক কিন্তু হল কই?? ধুর...পরশু সকালে শুধু ইমনকে ফোন করে বলেছিলাম পুরো ব্যাপারটা প্রথমে মানতে চায়নি।। কিন্তু শেষে বলেছিলো “সাবধানে যাস। ” জানতাম এটাই হবে। ও কখনো আমাকে বন্দি দেখতে চায়নি। ওর বিশ্বাস ভালোবাসা অনেকটা পাখির বাসার মত। সে তাকে মুক্ত করে কিন্তু দিনের শেষে আবার ঠিক ঘরে ফিরিয়ে আনে। কোনো জোর থাকে না তবু যেন একটা টান থাকে। বলবো না আমার জীবনে এর আগে প্রেম আসেনি। সেটা তো প্রতি বসন্তেই আসে কিন্তু ওরা ভালো-বাসা দিতে পারে নি কখনো... ছুঁয়েছিল সময়। কিন্তু মন ছুঁতে পারেনি। আর পারবেও না। দুপুরে যখন শহরে এসে পৌছালাম তখন দিল্লি স্টেশনে একজন অফিসের লোক নিতে এসেছিলো তিনিই হোটেলে নিয়ে এলেন। কিন্তু স্টেশন থেকে এক পা বাড়াতে যাব কেমন যেন মনে হল ইমন ডাকল। পিছনে তাকিয়ে দেখলাম কেউ না। ফোনের নোটিফিকেশন তখন বার্থডে উইশে ভোরে গেছে। তার ভিড়ে ছোট্ট একটা এসএমএস । “সাবধানে থাকিস , আর উলটো পালটা কিছু খাস না। ” । খেয়াল রাখা কেঊ ওনার কাছ থেকে শিখুক । রাগও করবে, হুহ এ কোথাকার নিয়ম কে জানে। অফিসে আজ কাজ নেই। কাল যা নির্দেশ আসবে সেই হিসাবে কাজ হবে । হোটেলে ঢোকার আগে একটা ছোট্ট ধাবায় ঢুকে পেট পুরে খেলাম। দেশের রাজধানীতে যদি নাই খেতে পারি তাহলে কি আর করলাম। হোটেলে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে দেখি ইমনের মিস কল।  কল ব্যাক করতেই বলল, “দিল্লি কেমন লাগছে?? ”
বললাম-
-বেকার... জন্মদিনে মানুষ এসব করে??
- করতে হয় ম্যাডাম। আপনি চাকুরিজীবী।
- হ্যাঁ ... সেই ...
- আচ্ছা শোন... গেছিস যখন ... তাজমহলটা আজই দেখে আসিস। কোথায় আছিস তুই??
-  এটা ঠিক দিল্লি নয়... নয়ডা, উত্তর প্রদেশ
- ওহ তাহলে তো আগ্রা কাছে কাছেই আছে।
-হুম আমিও তাই ভাবছি আজ বিকালে যাব একবার। কত পথ ??
- বেশি না । আড়াই ঘন্টা।
- কি??
- ওরকম করার কিছু হয়নি।  আজ জন্মদিন... এটা না করলে কি হয়??
তারপর অনেক তর্কাতর্কি করে বেড়িয়ে পড়লাম। গাড়ি ধরে যখন আগ্রায় পৌছালাম তখন বিকালের সূর্য ঢলে পড়েছে ঘুমের কোলে। পশ্চিম আকাশে তখন রঙের খেলা চলছে। শীত তখন জমিয়ে পড়েছে। মোবাইলে তখন টেম্পারেচার ১১ ডিগ্রি। গায়ের জ্যাকেটটা টেনে নিলাম জোরে। অনেকটা হেঁটে শেষে পৌছালাম পৃথিবীর অন্যতম সপ্ত আশ্চর্যে। সত্যি তা সপ্ত আশ্চর্যের দাবি রাখে। সন্ধ্যার নিভন্ত আলোতে যা দেখলাম তা এক কথায় অসাধারন ।  মৃত্যু সমাধিও যে এতো সুন্দর হতে পারে আগে জানা ছিলো না। হয়তো ভালোবাসা মৃত্যুকেও হার মানায়। ইমনকে মিস করছি। এমন সময় একদল বাচ্চা কাচ্চা ছুটে এলো। সবার হাতে একটা করে গোলাপ। দেখলাম এক একজন একটা গোলাপ দিচ্ছে কিন্তু কে দিয়েছে বললে। আর উত্তর দিচ্ছে না। ২২ নম্বর বাচ্চাটি শুধু গোলাপটা দিয়ে কিছু একটা আমার পিছনে ইঙ্গিত করলো। পিছনে ফিরে যা দেখেছি তাতে ভালোবাসার সংজ্ঞাটা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। হলুদ একটি গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইমন। আমি কিছু বলার অবস্থায় ছিলাম না। আমাকে এসে জড়িয়ে ধরে বলল জীবনের প্রতিটি আয়ুসন্ধি এই গোলাপের সৌরভে ভরে উঠুক। আমার যাওয়ার কথা শুনে সেই রাতেই ও নিজের টিকিট বুক করেছিলো। ও আমার ট্রেনেই এসেছিলো । না জানিয়ে। তারপর সারাদিন বসে এই প্ল্যান করেছে। এরপর যেটা হল সেটা হয়তো প্রতিটি ভালোবাসার প্রাপ্য। হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়লো ইমন। হাতে একটা আংটি। হয়তো এটা কিছু নতুন নয়। কিন্তু পৃথিবীর প্রেমের প্রতীকের সামনে দাঁড়িয়ে প্রোপোজ চির নতুনই বটে। আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি আংটিটা পরেই ওকে জড়িয়ে কেঁদে দিয়েছিলাম। হাউ হাউ করে। সেই যেদিন ও প্রথম গাঁদা ফুল দিয়ে প্রোপোজ করেছিল তারপর যেমন কেঁদেছিলাম। ঠিক তেমন। এরপর হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিল। বেশ পুরানো... রঙটা তামাটে হয়ে গেছে। খুলে দেখলাম ... আমারই হাতের লেখা... মনে পরে গেল ঐ যে ডিকশিনারির মধ্যে যে চিরকুটটা রাখা ছিলো। কিন্তু নিচে নতুন কালিতে লেখা “খুব ভালোবাসি”।
যমুনার পাশে বসে ডাইরি লিখছি। ও এদিকে জানি কোথায় গেল। বলল, “এক্ষুনি আসছি...” কিছুদূরে আরো অনেকে বসে গল্প করছে। যমুনার হাওয়ায় সত্যি একটা ব্যাপার আছে। ভালো-বাসা আছে.
ইমনের জন্য শুধু একটাই লাইনঃ
"আমি কখনো আকাশের চাঁদ চাইনি, ভয়ে, কারন জানি তুই হয়তো আমার চাওয়াকে পূরণ করতে রাতের আকাশে ডাকাতি করে আকাশকে নিঃস্ব করে দিবি"

Comments

Popular posts from this blog

ফিউসবক্স (Sequel of কলেজস্ট্রিট)

“ওম”

♥ ♥ ব্যারিকেড ♥ ♥