গেরুয়া
গেরুয়া
- Dip Saha Chowdhury ( রোদ্দুর )
অধ্যায় – ১
“LADIES AND GENTLEMEN, WE HAVE REACHED OUR DESTINATION AND WE WILL LAND ON THE RUNWAY. EVERYONE IS REQUESTED TO WEAR THEIR SEAT-BELTS”
অবশেষে ৬ মাস পর কলকাতায় পা রাখলো অনিমেষ। বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে দেখলো বিমানবন্দরের সামনে হাঁটুজল। মানে বেশ কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি হয়েছে। সেই জল ছাপিয়ে একটি ট্যাক্সি এসে দাঁড়ালো।
- কোথায় যাবেন দাদা?
কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে উত্তর দিল অনিমেষ।
- প্রতাপপুর যাবো। যাবে?
- প্রতাপপুর যাওয়া যাবে না স্যার। রাস্তায় জল নিকাশির কাজ চলছে। একটা হতে পারে স্যার আপনাকে স্টেশন ছেড়ে দিই। আপনি ট্রেন ধরে নিন।এখন ট্রেন ফাঁকাই পাবেন। আর লাগেজও বেশি নেই।আর এক মুহূর্তও ভাবলো না অনিমেষ। বাড়ি যাওয়া নিয়ে কথা। আর তাছাড়া ট্রেনে কয়েকমাস আগেও সে ডেলি প্যাসেঞ্জার ছিলো। অসুবিধা নেই। শুধু সময়টা বেখাপ্পা। মনে হয় শেষ ট্রেন কি বা আগের ট্রেনটা পাবে। চটপট উঠে পরলো লাগেজ নিয়ে। গাড়ি চলল আপন গতিতে। ভেজা কাঁচের এ প্রান্তে বসে আজ হঠাত নিজেকে বেশ আজব মনে হল অনিমেষের। মনে হল যেন কিছু একটা হতে চলেছে। বড় কোনো বিপদ।কি দাঁড়িয়ে আছে সময়ের ওপারে?? বেশ কয়েকা মাস ধরে হাজারো প্রশ্নের ভিরে ঘুরে বেরাচ্ছে সে। জার উত্তর তার কাছে নেই। আচ্ছা কর্মচক্র বলে কি আদতে কিছু হয়?? তাহলে অ যে সুনিতার জন্য এত কিছু করলো?? কিন্তু তার দাম তো অ পেল না। তাহলে কোথাও যেন জীবনের অঙ্কগুলি ভুল সমীকরন পেয়েছে। নাকি এই জীবনের গল্পটা আদতে তার নয়?? অনিমেষ সংসার চেয়েছিলো, তার চাওয়া তাকে বেবাগি করেছে। অনিমেষ ভালোবেসে ছিলো। তার ভালোবাসা তাকে ফকির করেছে... তাহলে কি কোথাও গল্পগুলি ভুল সাজানো হয়েছে?? এসবই ভাবছিলো অনিমেষ। হঠাত গাড়িটা থেমে গেল। হুম স্টেশন চলে এসেছে। টাকাটা মিটিয়ে যেই অনিমেষ ওয়ালেট-টা ভেতরে ঢোকাচ্ছে। সেই শুনতে পেল ট্রেনের হুইসিলের শব্দ। ট্রেন ঢুকছে। দৌরে ট্রেনের একটা সিট জোগার করে নিল সে। বাইরে তখন আবার বৃষ্টি নেমেছে। ঝট করে কাঁচটা নামিয়ে সিটে বসে পরলো। ফাঁকা ট্রেনে তখন দূরে কোনো সিটে কোনো বাউল বসে একতারায় সুর বাজাচ্ছে...
- কোথায় যাবেন দাদা?
কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে উত্তর দিল অনিমেষ।
- প্রতাপপুর যাবো। যাবে?
- প্রতাপপুর যাওয়া যাবে না স্যার। রাস্তায় জল নিকাশির কাজ চলছে। একটা হতে পারে স্যার আপনাকে স্টেশন ছেড়ে দিই। আপনি ট্রেন ধরে নিন।এখন ট্রেন ফাঁকাই পাবেন। আর লাগেজও বেশি নেই।আর এক মুহূর্তও ভাবলো না অনিমেষ। বাড়ি যাওয়া নিয়ে কথা। আর তাছাড়া ট্রেনে কয়েকমাস আগেও সে ডেলি প্যাসেঞ্জার ছিলো। অসুবিধা নেই। শুধু সময়টা বেখাপ্পা। মনে হয় শেষ ট্রেন কি বা আগের ট্রেনটা পাবে। চটপট উঠে পরলো লাগেজ নিয়ে। গাড়ি চলল আপন গতিতে। ভেজা কাঁচের এ প্রান্তে বসে আজ হঠাত নিজেকে বেশ আজব মনে হল অনিমেষের। মনে হল যেন কিছু একটা হতে চলেছে। বড় কোনো বিপদ।কি দাঁড়িয়ে আছে সময়ের ওপারে?? বেশ কয়েকা মাস ধরে হাজারো প্রশ্নের ভিরে ঘুরে বেরাচ্ছে সে। জার উত্তর তার কাছে নেই। আচ্ছা কর্মচক্র বলে কি আদতে কিছু হয়?? তাহলে অ যে সুনিতার জন্য এত কিছু করলো?? কিন্তু তার দাম তো অ পেল না। তাহলে কোথাও যেন জীবনের অঙ্কগুলি ভুল সমীকরন পেয়েছে। নাকি এই জীবনের গল্পটা আদতে তার নয়?? অনিমেষ সংসার চেয়েছিলো, তার চাওয়া তাকে বেবাগি করেছে। অনিমেষ ভালোবেসে ছিলো। তার ভালোবাসা তাকে ফকির করেছে... তাহলে কি কোথাও গল্পগুলি ভুল সাজানো হয়েছে?? এসবই ভাবছিলো অনিমেষ। হঠাত গাড়িটা থেমে গেল। হুম স্টেশন চলে এসেছে। টাকাটা মিটিয়ে যেই অনিমেষ ওয়ালেট-টা ভেতরে ঢোকাচ্ছে। সেই শুনতে পেল ট্রেনের হুইসিলের শব্দ। ট্রেন ঢুকছে। দৌরে ট্রেনের একটা সিট জোগার করে নিল সে। বাইরে তখন আবার বৃষ্টি নেমেছে। ঝট করে কাঁচটা নামিয়ে সিটে বসে পরলো। ফাঁকা ট্রেনে তখন দূরে কোনো সিটে কোনো বাউল বসে একতারায় সুর বাজাচ্ছে...
অধ্যায়- ২
কতক্ষন ঘুমিয়েছিলো জানা নেই অনিমেষের। ঘুম থেকে উঠে দেখলো চারিপাশ অন্ধকার। ট্রেনে হইচই হট্টগোল হচ্ছে। চেঁচামিচিতে শুনতে পেলো। ট্রেন থেমে গেছে কোনো কারনে লাইনে ইলেকট্রিকসিটি বন্ধ হয়ে গেছে। নিজের ফোনের টর্চলাইটটা জালিয়ে চারিদিকে ঘোরাতে গিয়ে দেখলো তার পাশের সিটে কামরার দেওয়ালে মাথা রেখে হেলান দিয়ে এক ব্যাক্তি বসে আছেন। গায়ে গেরুয়া বসন। মনে হয় কোনো সন্ন্যাসী হবেন। আরেকটু ঘুড়িয়ে দেখলো ওই বাউলরাই হট্টগোলটা বাধিয়েছে।কিছুটা অন্ধকারে এগিয়ে গেলো গেটের দিকে। গেট থেকে মাথা বের করে অন্ধকার ছাড়া কিছুই চোখে পড়লো না। ধুর ট্রেনে আসাটাই ভুল হয়েছে তার। নিজেকেই দোষ দিতে থাকলো অনিমেষ। হঠাত সব চিন্তা ভাবনাকে গুলিয়ে দিয়ে আলো জ্বলে উঠলো ট্রেনে। নিজের চিন্তার পাকে জর্জরিত হয়ে আবার সিটে গিয়ে বসলো সে। ট্রেন চলতে শুরু করলো। দেওয়ালে মাথা ঠেকিয়ে ঘার কাত করে পাশের লোকটার দিকে তাকালো সে।লোকটাকে খুব চেনা মনে হল, কোথায় যেন দেখেছে। কিন্তু ঠিক মনে করতে পারছে না। হঠাত করে সন্ন্যাসী নিজেই বলে উঠলেন “মুখ দেখে যদি মনের কথা বোঝা যেত তাহলে পৃথিবীর কোনো গল্প লেখার দরকার পড়ত না”
অধ্যায়-৩
মানুষের জীবনে কখন অজান্তে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যায় যার কোনো আঁচ মানুষ আগে টের পায় না, হয়তো পাওয়াও সম্ভব না। অনিমেষের জীবনে হয়তো এমন কোনো পরিবর্তন আসতে চলেছে সেটা সে টের পায় নি। লোকটার কথাটা না শোনার ভান করে এড়িয়ে জেতে চাইছিল অনিমেষ, ঠিক তখনই লোকটা বলে উঠলেন যে, “ এই পৃথিবীতে তোমার মনে ঘিরে আসা প্রশ্নগুলির যদি কেউ উত্তর দিতে পারে সেটা একমাত্র আমি। তবে তোমার কাছে সময় খুবই সীমিত, তাই অযথা আমি কে? বা কী করে তোমায় চিনি এসব প্রশ্ন না করাটাই ভালো।”
অনিমেষ মনে মনে ভাবলো ‘এ আমার জীবনের উত্তর দেবে কী করে এ তো আমার চাইতেও বেশী সংসারত্যাগী...’
অমনি মানুষটি অন্তর্যামীর মত বলে উথলেনঃ “এ জীবন তোমায় এখনো সংসার দেয় নি , তাই এখনো তুমি সংসারত্যাগি নও, প্রশ্ন কর...” এই বলে ডান হাতটা অনিমেষের বুকের বাঁদিকে রাখলেন। ‘ ধুর এভাবে এক অচেনা মানুষকে সুনিতার কথা কি করে জানাই??’- মনকে বলল অনিমেষ। পরমুহূর্তে লক্ষ্য করলো। লোকটার ডান হাতে একটা গভীর লম্বা দাগ। যেন অনেকদিনের ক্ষত। শরীর যাকে আজও বাঁচিয়ে রেখেছে। সেই গেরুয়া বসনের মানুষটি ভারী গলায় বললেন “ সুনিতা তোমার জীবনের একটা অধ্যায় মাত্র। তাকে জীবন ভাবলে ভুল করবে... কারন একটা অধ্যায়কে নিয়ে জীবন তৈরি হয়না... তাই জীবনে প্রত্যেক্টা অধ্যায় থেকে শেখ, জীবনটাকে গড়ে তোলো অধ্যায়ের শিক্ষা থেকে অধ্যায়ের লিপি থেকে না। ”
এতক্ষণে অনিমেষের বিশ্বাস হল যে সত্যিই ইনি অন্তর্যামী। তাই অযথা প্রশ্ন না করে সরাসরি বলল, “ সুনিতাকে তো সব দিয়ে ভালোবেসেছিলাম। তাকে কখনো একা অনুভব করতে দিই নি, ওর অন্ধকার সময়গুলিতে ওকে আলো দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কখনো অনুভব করতে দিতে চাইনি যে এ পৃথিবীতে সে একা। একা হতে পারে... তবুও সবশেষে সেই আমি নাকি ন্যাকামি করেছি এই বলে চলে গেলো... আমি কি এতই ছোটো করে ফেলেছিলাম। আমার মা নিজের মেয়েকে খুঁজে নিয়েছিলো তার মাঝে। কিন্তু সবশেষে ব্যার্থ সৈনিক হয়ে ঘরে ফিরেছি... আমার গল্পগুলি হয়েছে পদাতিক। কেন?”
মুখে মুচকি হাসি নিয়ে সন্ন্যাসী বলতে শুরু করলেন, “এক গ্রামে এক মালি থাকতো । তা তার একদিন শখ হলো আম গাছ লাগাবে... সেই আম সবাইকে দিয়ে বলবে এটা আমার গাছের আম। তো কথা মত আম গাছ লাগানো হলো। আম গাছকে সে নিজের মত করে বড় করলো, সার , জল কোনো কিছুতেই কার্পণ্য করলো না... গ্রামের সবচেয়ে ভালো মালি তার জীবনের সবকিছু লাগিয়ে দিলো আম গাছটাকে বড় করতে। বছর গেলো। গাছ বড় হল , কিন্তু মুকুল এলো না। তবুও মালি হাল ছাড়লেন না। চেষ্টা চালিয়ে গেলেন কিন্তু সব প্রচেষ্টাই বৃথা... একদিন রাতে তিনি গাছের নিচে বসেই কাঁদতে কাঁদতে বলল, হয়তো তার হাতের জাদু শেষ হয়েছে। যে মালি একদিন বড় বড় ফুল গাছে ফুল ধরাতে ব্যার্থ।”, এই বলেই কপাল চাপড়াতে লাগলো। হঠাত পাশ থেকে তার ছেলে এসে বলল “বাবা, জানো আমাদের ঘরের পাশে একটা ছোটো আম গাছের চারা বেড়িয়েছে। তুমি ওটাকে এরকম বড় করে দেবে।” এই কথায় মালি বলল, “না রে, ওই গাছে আর মুকুল ধরবে না। আমার আর সেই ক্ষমতা নেই...” ছেলে আর কিছু না বলে কাঁদতে লাগলো। ছেলে কান্না দেখে মালি ভাবল আরো একবার সুযোগ নেওয়াই যাক। তো পরেরদিন সকাল থেকেই যত্ন নেওয়া শুরু করলো। প্রায় দেড় বছরের মধ্যে গাছ মুকুলে ভরে গেল। আর তার কিছুদিনের মধ্যে তাতে আম এলো, বেশ সুস্বাদু আম। অর্থাৎ জীবনে কখনো কখনো আমরা জীবনে এমন কিছু মানুষকে যত্ন নেওয়ার চেষ্টা করি যারা আমাদের যত্নকে ধারন করার ক্ষমতা রাখে না। আর আমরা নিজেদেরকেই দোষী করে জীবনটাকে থমকে দিই। অন্যের দোষে নিজেকে শাস্তি দিই। আর জীবনটাকে এমন ভাবে কাটাই যেন জীবনটাই আমাদের নয়। মনে রেখো জীবনটা খুবই সীমিত তাই তোমার জীবনে যে সত্যিই এই ভালোবাসার যোগ্য তাদের এই যত্নটা প্রাপ্য। এমনও হতে পারে যে কেউ হয়তো বহু অতীত থেকে তোমার জন্য পথ সাজাচ্ছে । হয়তো এগুলো তার প্রাপ্য... নিজেকে গড়ে তোলো। ভেঙ্গে ফেলো। জীবন ভাঙ্গার মাঝে গড়ার গল্প।”
এই বলে সন্ন্যাসী সিট ছেড়ে গেটের দিকে এগিয়ে গেলেন... অনিমেষও সেই গেরুয়া পথ অনুসরণ করলো।
অনিমেষ মনে মনে ভাবলো ‘এ আমার জীবনের উত্তর দেবে কী করে এ তো আমার চাইতেও বেশী সংসারত্যাগী...’
অমনি মানুষটি অন্তর্যামীর মত বলে উথলেনঃ “এ জীবন তোমায় এখনো সংসার দেয় নি , তাই এখনো তুমি সংসারত্যাগি নও, প্রশ্ন কর...” এই বলে ডান হাতটা অনিমেষের বুকের বাঁদিকে রাখলেন। ‘ ধুর এভাবে এক অচেনা মানুষকে সুনিতার কথা কি করে জানাই??’- মনকে বলল অনিমেষ। পরমুহূর্তে লক্ষ্য করলো। লোকটার ডান হাতে একটা গভীর লম্বা দাগ। যেন অনেকদিনের ক্ষত। শরীর যাকে আজও বাঁচিয়ে রেখেছে। সেই গেরুয়া বসনের মানুষটি ভারী গলায় বললেন “ সুনিতা তোমার জীবনের একটা অধ্যায় মাত্র। তাকে জীবন ভাবলে ভুল করবে... কারন একটা অধ্যায়কে নিয়ে জীবন তৈরি হয়না... তাই জীবনে প্রত্যেক্টা অধ্যায় থেকে শেখ, জীবনটাকে গড়ে তোলো অধ্যায়ের শিক্ষা থেকে অধ্যায়ের লিপি থেকে না। ”
এতক্ষণে অনিমেষের বিশ্বাস হল যে সত্যিই ইনি অন্তর্যামী। তাই অযথা প্রশ্ন না করে সরাসরি বলল, “ সুনিতাকে তো সব দিয়ে ভালোবেসেছিলাম। তাকে কখনো একা অনুভব করতে দিই নি, ওর অন্ধকার সময়গুলিতে ওকে আলো দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কখনো অনুভব করতে দিতে চাইনি যে এ পৃথিবীতে সে একা। একা হতে পারে... তবুও সবশেষে সেই আমি নাকি ন্যাকামি করেছি এই বলে চলে গেলো... আমি কি এতই ছোটো করে ফেলেছিলাম। আমার মা নিজের মেয়েকে খুঁজে নিয়েছিলো তার মাঝে। কিন্তু সবশেষে ব্যার্থ সৈনিক হয়ে ঘরে ফিরেছি... আমার গল্পগুলি হয়েছে পদাতিক। কেন?”
মুখে মুচকি হাসি নিয়ে সন্ন্যাসী বলতে শুরু করলেন, “এক গ্রামে এক মালি থাকতো । তা তার একদিন শখ হলো আম গাছ লাগাবে... সেই আম সবাইকে দিয়ে বলবে এটা আমার গাছের আম। তো কথা মত আম গাছ লাগানো হলো। আম গাছকে সে নিজের মত করে বড় করলো, সার , জল কোনো কিছুতেই কার্পণ্য করলো না... গ্রামের সবচেয়ে ভালো মালি তার জীবনের সবকিছু লাগিয়ে দিলো আম গাছটাকে বড় করতে। বছর গেলো। গাছ বড় হল , কিন্তু মুকুল এলো না। তবুও মালি হাল ছাড়লেন না। চেষ্টা চালিয়ে গেলেন কিন্তু সব প্রচেষ্টাই বৃথা... একদিন রাতে তিনি গাছের নিচে বসেই কাঁদতে কাঁদতে বলল, হয়তো তার হাতের জাদু শেষ হয়েছে। যে মালি একদিন বড় বড় ফুল গাছে ফুল ধরাতে ব্যার্থ।”, এই বলেই কপাল চাপড়াতে লাগলো। হঠাত পাশ থেকে তার ছেলে এসে বলল “বাবা, জানো আমাদের ঘরের পাশে একটা ছোটো আম গাছের চারা বেড়িয়েছে। তুমি ওটাকে এরকম বড় করে দেবে।” এই কথায় মালি বলল, “না রে, ওই গাছে আর মুকুল ধরবে না। আমার আর সেই ক্ষমতা নেই...” ছেলে আর কিছু না বলে কাঁদতে লাগলো। ছেলে কান্না দেখে মালি ভাবল আরো একবার সুযোগ নেওয়াই যাক। তো পরেরদিন সকাল থেকেই যত্ন নেওয়া শুরু করলো। প্রায় দেড় বছরের মধ্যে গাছ মুকুলে ভরে গেল। আর তার কিছুদিনের মধ্যে তাতে আম এলো, বেশ সুস্বাদু আম। অর্থাৎ জীবনে কখনো কখনো আমরা জীবনে এমন কিছু মানুষকে যত্ন নেওয়ার চেষ্টা করি যারা আমাদের যত্নকে ধারন করার ক্ষমতা রাখে না। আর আমরা নিজেদেরকেই দোষী করে জীবনটাকে থমকে দিই। অন্যের দোষে নিজেকে শাস্তি দিই। আর জীবনটাকে এমন ভাবে কাটাই যেন জীবনটাই আমাদের নয়। মনে রেখো জীবনটা খুবই সীমিত তাই তোমার জীবনে যে সত্যিই এই ভালোবাসার যোগ্য তাদের এই যত্নটা প্রাপ্য। এমনও হতে পারে যে কেউ হয়তো বহু অতীত থেকে তোমার জন্য পথ সাজাচ্ছে । হয়তো এগুলো তার প্রাপ্য... নিজেকে গড়ে তোলো। ভেঙ্গে ফেলো। জীবন ভাঙ্গার মাঝে গড়ার গল্প।”
এই বলে সন্ন্যাসী সিট ছেড়ে গেটের দিকে এগিয়ে গেলেন... অনিমেষও সেই গেরুয়া পথ অনুসরণ করলো।
অধ্যায়- ৪
গেটে দাঁড়িয়ে অনিমেষ ভাবতে লাগলো যে একজন মানুষ কারো সম্বন্ধে এতো কি করে জানতে পারে?? হঠাত ট্রেনটি দুলতে শুরু করলো... অনিমেষ দেখলো যে একই লাইনে দূর থেকে আরেকটি ট্রেন আসছে... কিছু বোঝার আগেই সেই সন্ন্যাসী অনিমেষকে নিয়ে ঝাঁপ দিলেন। দুজনেই গিয়ে পরলেন বেশ কিছু দূরে... সঙ্গে বিকট আওয়াজ। হ্যা... দুটো ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে কেঁপে উঠলো সবকিছুই। জ্ঞান হারাচ্ছে অনিমেষ... ওই আধমগ্ন অবস্থায় অনিমেষ জড়ানো গলায় জিজ্ঞাসা করলোঃ- “আপনি কে...??” ততক্ষণে ওই সন্ন্যাসী ফেরার পথ ধরেছেন। বাতাস কাঁপিয়ে উত্তর এলো, “অনিমেষ চৌধুরী। বয়েস ৪০...” অনিমেষ লক্ষ্য করলো, তার ডান হাতে অনেকটা গভীর ক্ষত... রক্ত গড়াচ্ছে সেখানে... আর কিছু মনে নেই।
পরেরদিন হাসপাতালে জ্ঞান ফিরলো অনিমেষের। চারিদকে তখন পরিজনদের ভিড়, একটু পরেই সাংবাদিকরা আসবে। কারন কালকের দুর্ঘটনায় একমাত্র জীবিত ব্যাক্তি হলেন ২২ বছরের অনিমেষ চৌধুরী। অনিমেষের কানে তখন একটাই কথা বাজছে,
“জীবনটা খুবই সীমিত...”
পরেরদিন হাসপাতালে জ্ঞান ফিরলো অনিমেষের। চারিদকে তখন পরিজনদের ভিড়, একটু পরেই সাংবাদিকরা আসবে। কারন কালকের দুর্ঘটনায় একমাত্র জীবিত ব্যাক্তি হলেন ২২ বছরের অনিমেষ চৌধুরী। অনিমেষের কানে তখন একটাই কথা বাজছে,
“জীবনটা খুবই সীমিত...”
“LIFE IS NOT ABOUT WHAT WE GOT, IT’S ALL ABOUT HOW WE PLAYED IT AS OURSELVES.”
Comments
Post a Comment