Say-ভালোবাসি ♥
Say-ভালোবাসি ♥
-Dip Saha Chowdhury
(#রোদ্দুর)
“যেখানে রাগ এসে ঘুম ভাঙ্গায়,
যে দেশে অভিমানরা বড্ড আব্দারি।
প্রেম সেখানেই ঘর বাঁধে,
মাথা রাখে প্রেমিকের কাঁধে ।।”
পিয়া রাগের মাথায় নিজের
শখের ফোনটা সোজা ছুঁড়ে মারল আয়নার দিকে। নিজের চোখের সামনে নিজেরই অবয়বকে চোখের
সামনে তছনছ হয়ে যেতে দেখল সে। একটা এসএমএস সকালটা বিগরে দিয়েছে পিয়ার। অর্নব সকালে
এসএমএস করে লিখেছে। “ পিয়া... একটা জরুরি কাজে সকালেই বর্ধমান যেতে হবে। এবার
অষ্টমীর অঞ্জলিটা দেওয়া হবে না, তোর সাথে। প্লিজ রাগ করিস না। রাতের মধ্যে ফিরে
আসবো, যদি সম্ভব হয়”। ম্যাসেজটা পরে অষ্টমীর ভোরে এতটাই মাথা গরম হয়ে গেছে পিয়ার
যে ম্যাসেজে লিখলো। “মর গিয়ে”। কিন্তু সৌভাগ্যবশত ব্যালেন্স না থাকায় ম্যাসেজটা
গেল না। তাতেই রেগে ফোনের সাথে আয়নার সঙ্ঘাত। বাবা মা আজ বাড়ি নেই। কাজে বাইরে
গেছে তাই এই সংঘর্ষের কথা কেউ জানতে পারলো না। ভেবেছিলো আজ বাড়িতে দুজনে একসঙ্গে
একটু সময় কাটাবে। তা না উনি বর্ধমান গেছেন। মনে মনে পিয়া বলল, “কী বর্ধন করতে
গেছেন আমিও দেখব...”। বাথরুমে ঢুকে ব্রাশ করতে করতে সবুজ তোয়ালেটার দিকে চোখ পরতেই
অনেক কথা মনে পরে গেল। এই তো কদিন আগে ওরা একসাথে গিয়ে একটা সবুজ পাঞ্জাবি আর একটা
সবুজ শাড়ি কিনে এনেছে। Matching জামা আর শাড়িতে ওরা এবার অষ্টমীতে সবাইকে দেখিয়ে দেবে যে
ওরাই সবার উপরে Best Couple। এসব ভেবে আরো মাথা গরম হল পিয়ার। “কি ভাবে নিজেকে?? কত বড়
হনু।” বেডরুমে এসে আলমারিটা খুলেই দেখল সামনে ঝুলছে সেই সবুজ শাড়িটা। একটানে
সেটাকে নিচে ফেলে দিলো পিয়া... রাগে মাথা গরম হয়ে উঠেছে। অঞ্জলি যখন দেবে বলেছে,
দেবেই। দরকার হয় পাড়ার ছেলে ধরে এনে অঞ্জলি দেবে। চিরকালই পিয়াকে বাড়ির মানুষ ,
বন্ধুরা জেদের জন্যই চেনে। আজ একটা বড় পাটাখা ফাটবে সেটা বোঝাই যাচ্ছে। বলতে গেলে
বিন বুলায়ে দেওয়ালি। ঐদিকে পিয়ার পেটে ছুঁচো দৌড়াচ্ছে।কিন্তু অঞ্জলি তো খালি পেটে
দিতে হয়। ধুর... খালি পেট!! অর্ণবই যখন নেই তাহলে অতো ভেবে কি লাভ। ফ্রিজটা খুলতে
আর একবারও ভাবলো না পিয়া। ফ্রিজ খুলে পিয়া দেখল যে কালকের বাসি পরোটা কিছু আলুর দম।
আহা এই অমৃত। কোনো রকমের পরোটাগুলি ছিড়ে খেতে লাগলো। খাওয়া শেষে প্লেটটা কোনোরকমে
বেসিনে রেখে টাওয়ালটা নিয়ে স্নানে গেল পিয়া।
“কতো অভিমান লেখা রয়
প্রেমিকার আঁচলে,
কতো প্রেমিক সর্বনেশে
প্রেমিকার আদরে।
তবু তারা আব্দারি, একটা
ক্ষমার আশায়,
বেঁচে আছে ভালোবাসায়”
স্নান থেকে এসে এই
এসএমএসটাই মোবাইলে দেখলো পিয়া। প্রেরক অর্ণব, দেখেই আবার মাথাটা গরম হয়ে গেলো
পিয়ার। রিপ্লাইতে লিখলো “বা#$#$”. এরপর ফোনটা সুইচ অফ করে দিলো। বাইরে তখন অঞ্জলি দেওয়ার
জন্য মাইকে Announcement হচ্ছে। কোনোরকমের শাড়িটা পড়ছে পিয়া। হঠাত শুনতে পেলো মাইকে
কেউ তার নাম ধরে বলছে তাড়াতাড়ি অঞ্জলি দিতে আসতে। গলাটা সম্বিতদার। মনে পড়ল যে আজ
সকালে অনেক কিছু করার দায়িত্ব ছিল তার উপর। রাগের চোটে ভুলেই গেছে পিয়া। শাড়িটা
পড়ে এবার যখন সে অর্ণবের দেওয়ার হাতের কাজের নেকলেসটা পড়তে গেল তখন নিজেকে আয়নার
সামনে দেখে সব রাগ ভুলে গেল সে। কারন সত্যিই অর্ণবের চোখে নিজেকে দেখতে পাচ্ছে সে।
সত্যিই প্রেমিকের চোখে প্রেমিকা কতই না সুন্দর। চুল বাঁধতে বাঁধতে অর্ণবের মাঝে
নিজেকে হারিয়ে ফেলল পিয়া। সত্যিই রাগের মাথায় অনেক কিছুই ভেবে ফেলেছে সে।
লিপস্টিকটা যখন ঠোঁট ছুলো তখন ঘড়ির কাঁটা তারা দিচ্ছে। তাই তাড়াহুড়ো করে বেরতে
গিয়ে হোঁচট খেলো পিয়া। কিন্তু একি পড়লাম না কেন?? এমন্টাই ভাবল পিয়া। চোখ খুলতেই
দেখলো যার কোলে সে পড়লো সে আর কেউ না। “অর্ণব”। অর্নব বলল, “এই জন্যই যেতে পারলাম
না... আমাকে ছাড়া তো এক পাও চলতে পারিস না তার উপর আবার এতো রাগ যেন জল ফুটে চা
করা যায়...”
কোনোরকম উঠে মুখ ঘুড়িয়ে দাঁড়িয়ে
রইলো। নিজের রাগ ততক্ষনে চোখের কোনায় এসে জলে পরিনত হয়েছে। ধরা গলায় বলে উঠলো পিয়া
“I Love You”. অর্ণব তখন আলতো গালে চুমু খেয়ে বলল, “Say ভালোবাসি... পাগলি”। বাইরের #রোদ্দুর তখন
অর্ণবের সবুজ পাঞ্জাবীতে পরে বারান্দাটায় সবুজ আভা ছড়াচ্ছে। দূরে কোথাও হাল্কা
সুরে বেজে চলেছে “তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো... ছেড়ে দেবো না”
Comments
Post a Comment