“ প্রতিমা ”



“ প্রতিমা ”
-         Dip Saha Chowdhury ( রোদ্দুর )
ও দাদা... ও দাদা দাঁড়ান না... গাড়িটা হুশ করে বেড়িয়ে গেলো... এই নিয়ে তিন নম্বর গাড়িটাও দাঁড়ালো না। রাস্তার পাশে পরে রয়েছে একটা দেহ। না নিথর নয়। যন্ত্রণায় ছটফট করছে দেহটা। একটু  আগে একটা গাড়ি এসে মেরেছে ছেলেটাকে। না মাথায় তেমন লাগেনি কিন্তু পায়ের অনেকটা অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে জায়গাটা। এই অবস্থায় একজন দোকানদার এসে সাহায্য করার চেষ্টা করছে। কিন্তু কোনো গাড়ি দাড়াচ্ছে না। ঐদিকে ছেলেটা আস্তে আস্তে নিস্তেজ  হয়ে পড়ছে। হঠাত দূর থেকে দেখা গেলো একটা লাল গাড়ি আসছে। জানে এও দাঁড়াবে না। তবুও হাত নাড়িয়ে চেস্টা করলো লোকটা। গাড়িটাও না দাড়িয়ে বেড়িয়ে গেলো। এবার কি করবে। এই শুনশান রাস্তাতে কাকে পাবে? রক্তক্ষরণ বেড়েই চলেছেকিছু একটা করতে হবে। দোকানদারটি দিশাহীন ভাবে ভেবে চলল, এমন সময় সেই লালগাড়িটা Reverse Gear এ ফিরে এলো। গাড়ি থেকে নামলেন এক ভদ্রমহিলা সঙ্গে তার ড্রাইভার। ড্রাইভার আর দোকানদার দুজনে মিলে  লোকটিকে ধরাধরি করে গাড়িতে তুললেন। মহিলাটি অবশ্য গেলেন না। বললেন “সোজা নারায়ানপুর নিয়ে যাবে” । এই বলে একটা ব্ল্যাঙ্ক  চেক হাতে ধরিয়ে দিলেন । নিচে সই করা “প্রতিমা চক্রবর্তী”। এটা বোঝাতে যে চিকিৎসার খরচ সম্বন্ধে ভাবা না হয়। ততক্ষণে একজন ১৮-১৯ বছরের ছেলে এসে কাছে দাঁড়িয়েছে। মুখ দেখে বোঝা জাচ্ছে যে সে পুরো ঘটনাটাই দেখেছে কিন্তু এগিয়ে যাওয়ার সাহস সে পায়নিগাড়িটা চলে যাওয়ার পর সে একটু একটু করে এগিয়েছেপ্রতিমাদেবী একটু একটু করে এগিয়ে গেলেন একটা বেঞ্চের দিকে। বিকেলের #রোদ্দুর তখন লালচে হয়ে আসছে। আশ্বিনমাসের পুজোর পঞ্চমী সেদিনসামান্য খুড়িয়ে চলেন তিনি। তাই বেঞ্চটাতে বসার আগে বেশ একটু সময় নিলেন। মুখ তুলে দেখলেন সামনে একটি ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। কেমন এক অবাক চোখে। কিছু যেন বলতে চায়।
প্রতিমাদেবী বললেন – “এদিকে আয়।”
ছেলেটি চুপচাপ কাছে এলো,
 প্রতিমাদেবী বললেন, “কিছু বলবি??”
ছেলেটি আমতা আমতা করে বলল, “না, আসলে, এতোগাড়ি এলো গেল কিন্তু আপনিই...”
ছেলেটি বলা শেষ করার আগেই মহিলাটি তাকে থামিয়ে বললেন, “ আজ থেকে চার বছর আগে হলে হয়তো ফিরেও তাকাতাম না... কিন্তু সময় অনেক কিছু কেঁড়ে নেয়, কিন্তু বদলেও দেয় অনেকটা। কখনো সমুদ্রের ঢেউয়ে পা ডুবিয়েছিস?? দেখবি প্রথম দিকে ফিরতি ঢেউতে তুই হয়তো হুমড়ি খেতে থাকবি, কিন্তু একসময় দেখবি তোর পা ঠিক নিজেকে সামলে নিয়েছে, আদতে কিন্তু ঢেউ কিন্তু বদলায়, শুধু তোকে তার মনের মত করে তৈরি করে নেয়। জীবন আদতে এরকমই”
কথাটা ঠিক বুঝতে পারলো না ছেলেটা, মুখটা ঠিক কাচুমুচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। মনের ভাবটা বুঝতে পেরে প্রতিমা দেবী বললেন, “আয় বস, বলছি”
প্রতিমা দেবী মাটির দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলেন।
“চার বছর আগে... তখন মে মাস... কলেজ সেরে বাড়ি ফিরছি... কানে তখন ফোন। অমিতের কথা তখন মন দিয়ে শুনছি, প্রেমটা নতুন নয় কলেজের ফাস্ট ইয়ারের এক শীতের সকালে আমাদের গল্প শুরু হয় , ধীরে ধীরে তার পরিণতি পায়। এ গল্প যখন তখন আমি এম.কমের লাস্ট ইয়ার। কানে তখন অর কণ্ঠ, মনে প্রেম। হঠাত ফাঁকা রাস্তায় পাশ দিয়ে একটা গাড়ি চলে গেলো। গাড়ির জানলা থেকে মুখ বাড়িয়ে একটি ছেলে একটা বাজে কমেন্ট করলো, আর তাতেই আমি রেগে গিয়ে একটা ঢিল ছুড়ে মারলাম। বুঝিনি ঢিলটা আমার জীবনের অনেকটা জুড়ে দাগ এঁকে দেবে। ঢিলটা গিয়ে লাগলো ঠিক ওদের বামপাশের আয়নায়। গাড়িটি কিন্তু দাঁড়ালো না। ফোনটা ততক্ষনে আবার কানে তুলে নিয়েছি। কথা চলছে। এমন সময় গাড়িটি ফিরে এলো তবে সর্বোচ্চ গতি নিয়ে। সোজা মারলো আমার বাঁ পায়ে। আমি ছিটকে গিয়ে পড়লাম ঘাসের উপর, ঘাসের সবুজ তখন ধিরে ধিরে লাল হচ্ছে।। আমি জন্ত্রনায় ছটফট করছি... কতক্ষন ওরকম ছিলাম জানিনা। সময় তখন মাপছি সাহায্য না করতে আসা গাড়ির সংখ্যায় মাপছি। এটুকু মনে আছে এক মাঝ বয়েসি সাইকেল চালক দাঁড়িয়ে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এসেছিলো, শুধু তাকে আঙ্গুল দিয়ে পরে থাকা মোবাইলটা দেখিয়ে দিলাম... তারপর আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান যখন ফিরলো, ততদিনে তিন্দিন কেটে গেছে... বাঁ পায়ে আর কিছু অনুভব করলাম না।”
এই বলে বাঁ পায়ের উপর থেকে জিন্সটা সামান্য একটু তুললেন প্রতিমাদেবী। সেখানে আস্তে আস্তে বে-আব্রু হল একটি কাঠের পা । আবার বলতে শুরু করলেন প্রতিমাদেবী –
“ জীবনে ড্যান্সার হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম... স্বপ্ন আজ শুধুই দুঃস্বপ্ন... অমিত আর ফোন ধরেনি। আমিও আর কখনো ফোন করিনি... হয়তো আমিই বোঝা হয়ে গেছিলাম... হুমম... ”
গলাটা তখন ধরে এসেছে... ধরা গলায় বললেন “জল...”
চমক ভেঙ্গে ছেলটি দেখলো বোতলে জল নেই... বলল দাঁড়াও দিদি। বলে চটপট একটু দূরে জল আনতে চলে গেল। প্রতিমা দেবীর চোখের কোনায় জল ... বেঞ্চের কাঠ খামচে ধরে উনি হাউ হাউ করে কাঁদতে শুরু করলেন। দুরের দোকানে তখন রেডিওতে রিপিট টেলিকাস্টে বাজছে... “তুমি জাগো... জাগো দুর্গা দশপ্রহরহরনী...”

এগল্পের ইতি এখানেই নয়... একটু বাকি আছে...
২ বছর পর...
স্টেজে কাঠের পা নিয়ে ভারতনাট্যম শেষ করলেন প্রতিমা চক্রবর্তী... চারিদিকে তখন হাততালি সুরে কে জানি বলে যাচ্ছে “Tujhse Naraz Nehi Zindegi Hairan huu...

গল্পের শেষে শুধু একটা লাইন- “Humanity and Hope, Both Start With H. Never Lose Hope, Never Lose Humanity or Both


Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

ফিউসবক্স (Sequel of কলেজস্ট্রিট)

“ওম”

♥ ♥ ব্যারিকেড ♥ ♥