|| অ-সৈনিক Live ||
-Dip Saha Chowdhury
স্থানঃ শ্রীনগর,জম্মু ও কাশ্মীর
সময়ঃ রাত ১০টা ২০
মিনিট
অন্ধকারে এক ছায়ামুর্তি দাঁড়িয়ে আছে। রাতের
আকাশে অগুনিত তারার সমাবেশ। ছেলেটির একহাতে জ্বলন্ত সিগারেট। নীলচে ধোঁয়া মনে হয়
আজ অন্যগল্প বলছে। আরেক হাতে AMT Auto Mag III কাঁধে একটা ছোট্ট সাইডব্যাগ। তাতে অন্ততপক্ষে 40টা বুলেট ম্যাগাজিন আছে। হাতের সিগারেটটা ফেলে
দিয়ে ফোনটা বের করে আনল ছেলেটি, শুরু হল ফেসবুক
লাইভ,
" নমস্কার, আমি আশুতোষ
ব্যানার্জি। এটুকুই আমার পরিচয়, এর বেশি কিছু বলব না, আমি LOC তে দাঁড়িয়ে আছি। এ জায়গাতে
কোনো সিক্যুরিটির ঘনাঘটা নেই। একটু বুদ্ধি থাকলেই ওপারে যাওয়া বা ওপার থেকে আসা
সম্ভব। আমিও তাই করতে চলেছি। ঐ পারে বেশ কিছু তাবু দেখতে পারছি। যেখান থেকে বিগত
এক সপ্তাহে ১৭ জন এ পথ দিয়ে ভারতে এসেছে। আমি লক্ষ্য করেছি প্রত্যেকেই সসস্ত্র।
তাই আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। কাল যে পার হয়ে এপাশে এসেছে তাকে হত্যা করে তার
অস্ত্রগুলি তুলে নিয়েছি। আর এও বুঝেছি যে আমাকে এগোতে হবে। কম্যান্ডারের কাছে এই
ভিডিও পৌছাবে আমি জানি তাই স্যারকে সম্মান জানিয়ে বলছি স্যার আপনার হয়তো অর্ডার
দরকার হয় কিন্তু ভারতমাতাকে যারা বাড়েবাড়ে বিদ্ধ করেছে তাদের মারতে আমার কোনো
অর্ডারের দরকার নেই। আমি বাঙালি , সেই বাংলায় জন্ম হয়েছে যেখানে একদিকে স্বামী
বিবেকানন্দ বীর হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন অন্যদিকে সুভাষচন্দ্র বীর তৈরি করেছেন।
ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকি , লোকনাথ বল এরা কখনো অর্ডার মানেন নি। হয়তো তাই আজ
আমদের কোনো ইংরেজের অর্ডার মানতে হয়না তাদের কাঁধে কাঁধ রেখে আমরা এগিয়ে চলেছি ,
দাস নয় আজ আমরা প্রতিযোগী, আমরা সেই ভারতমায়ের সেই দস্যি ছেলে মেয়েরা যারা চিরন্তন
অবাধ্য , ডানপিটে কিন্তু বিশ্বাস করুন মাকে বড্ড ভালোবাসি তাই মায়ের চোখে জল দেখলে
আমাদের চোখে আগুন ঝরে। একটা সিস্টেমকে চালানোর জন্য একটা Discipline দরকার। কিন্তু
সিস্টেমটাকে বাঁচানোর জন্য একটা Fierceness
দরকার পরে। আপনারা সিস্টেমটা খুব সুন্দর
চালাচ্ছেন কিন্তু আজ সিস্টেমটাকে বাঁচানোর দরকার পড়েছে। তাই ছাই থেকে আবার ফিনিক্স
জন্ম নিয়েছে। আমরা বারবার জন্ম নিই নামটা বদলে যায় কিন্তু কাজটা একই। ভারতমাকে
রক্ষা করা। আজ যখন বলি ‘জয় হিন্দ’ তখন মনে হয় আগুনটা হয়তো কোথাও কমে গেছে তাই
মশালটা আবার ধরার সময় এসেছে। আমার এই বন্দুকের আড়াই ইঞ্চি গুলিও জানে যে তাকে শেষ
বারুদ পর্যন্ত লড়তে হবে, জিততে না পারুক মাথা নত করবে না। এদেশ গৌতম বুদ্ধের
একাগ্রতাকে জন্ম দিয়েছে আবার অশোকের মত অপরাজেয় যোদ্ধাকে তুলে ধরেছে, আজ আমি দুটোই
চাই। একাগ্রতা আর অপরাজেয়তা। গীতায় একটা কথা বলা হয়েছে, প্রথমে যুদ্ধ কর, হেরে
গেলে ক্ষমা চাও, জিতলে ক্ষমা কর, আপোশ কাপুরুষতার পরিচয়। তাই আমি যুদ্ধের আহবান
করছি, আমি একাই যোদ্ধা তাও মনে ভয়ের জায়গাটা খুব কম। কারন আজ আমার আগুন শত মানুষের
মধ্যে দাবানল সৃষ্টি করবে, আবার জন্ম নেবে লক্ষ্মীবাঈ, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, বিনয়
, বাদল, বাল গঙ্গাধর তিলক। জানি আমি আজ কোনো সৈনিকের পোশাকে নেই। কিন্তু আমার মনে
তা নিয়ে কোনো সঙ্কোচ নেই। কারন আমি জানি দেশের জন্য করছি। জানিনা ফিরবো নাকি। যদি মৃত্যু
আসে তবে তা উৎসর্গ করব তাদের যারা নিজের আত্মীয় পরিজন ভুলে শতকোটি ভারতবাসীকেই
আত্মীয় মনে করেছে, সেই কৃষককে যে বুঝতে দেয়নি তার ঘরে অন্ন নেই, সেই মায়েদের যারা
গর্ব করে বলে আমার মেয়ে , আমার ছেলে, দেশের জন্য করছে। সেই মেয়েটিকে উৎসর্গ করছি
যে ধর্ষিত হয়েও বলে একটা ছেলের জন্য আমি আমার দেশকে খারাপ বলতে পারি না..., আজ
আমার এ কথায় যদি কারো চোখে জল ঝরে, তাহলে আদেশ করছি, জল নয় আগুন ঝরাও, সে আগুন
যাতে ভারত মা গর্বিত হয়... হে অ-সৈনিক বীর দেশের জন্য করতে কোনো তকমা লাগে না।
একটা আগুন লাগে। জেগে ওঠো ভারতবাসী, সারে যাহা সে আচ্ছা ইয়ে হিন্দুস্তান
হামারা..., জয় হিন্দ, বান্দেমাতারাম।"
তারপর আর কেউ তাকে দেখেনি
বলে সবাই বলে , কিন্তু আমরা সবাই দেখেছি , ঐ প্রতিদিন আয়নার সামনে দাঁড়ালে যে
মানুষটিকে দেখা যায় , আশুতোষকে নাকি ঠিক তার মতো দেখতে।
Comments
Post a Comment