“Status – সিঙ্গেল”
-Dip Saha Chowdhury
( #রোদ্দুরের_গল্প)
“প্রতি রাতে জেগে উঠি,
আমি তোর স্বপ্নতে
আজ তুই জেগে ওঠ...
আমার এই গল্পতে”
মন খারাপ হলে কাউকে না বলেই বেড়িয়ে পড়া এটা ইদানিং স্বভাব হয়ে গেছে ইমনের। তাই আজও সকাল সকাল বেড়িয়ে পরেছে ইমন। গন্তব্য দক্ষিনেশ্বর। পুজো দিতে নয়। গঙ্গার ঘাটের ভিড়ে হারিয়ে যেতে এসেছে সে। কথায় বলে স্রোত আর সময় অপেক্ষা করে না। কিন্তু সময়কে দেখা যায় না, স্রোতকে দেখা যায়। স্রোতগুলি যেন অনেকটা জীবনের মতো কখনো জোয়ারে ভাসায়, কখনো জীবনে ভাটায় গতি রুদ্ধ করে। কিছু একটা ভেবে উঠে পড়লো ইমন। নাহ ফেরার পথ ধরতে হবে, পকেটের ভেতর থেকে ফোনটা ভাইব্রেট করে উথলো, একটা এসএমএস,
রাগিণীঃ
“দক্ষিণেশ্বর এসেছিস বলিস নি কেন??”
এসএমএস পরে চমকে গেলো ইমন। চারপাশে তাকিয়ে তাকে খুঁজতে লাগল ইমন কিন্তু নাহ নেই।। সুতরাং এসএমএস ভরসা।
ইমন উত্তর দিলো
- “তুই কোথায়??”
সঙ্গে সঙ্গে উত্তর এলো
- বাসে উঠলাম। পেছনের সিটটা ফাঁকা আছে এখনো।
ম্যাসেজটা পড়েই অলিম্পিকের দৌড় লাগালো ইমন, বাসের কাছে যেতেই দেখলো মিটমিট করে হাসছে রাগিণী। কিন্তু পাশে চোখ পড়তেই ইমন সংযত হয়ে গেল । পাশে রাগিনীর দজ্জাল কাকা। বাস ততক্ষণে চলতে শুরু করেছে। অগত্যা... পেছনের সিটে বস্তে হল ইমনকে। কথা বলার জো নেই তাই এসএমএসই ভরসা। প্রথম প্রশ্নটা ইমনই করলো
- “এখানে কি করছিলি??”
- প্রেম করতে এসেছিলাম! তুই?
- প্রেম?? নতুন কাউকে পেলি নাকি? আমি এমনি ঘুরতে এসেছিলাম
- হাঁ অনেককে পেলাম। পুরো মন্দিরের সব ছেলেতো আমার পেছনেই ছিল। শুধু একজন বাদে। সে তো আবার গঙ্গা ঘাটে মন উদাসীর গান করছিলো। লজ্জা করে না তোর নিজের বৌকে এরকম প্রশ্ন করিস? মাঞ্ছি এখনো বৌ হইনি তাও এরকম প্রশ্ন... নির্লজ্জ।
- শোন আমি জানি তোকে আমি ছাড়া কেউ কন্ট্রোল করতে পারবে না তাই ইয়ার্কি করে কথাগুলো বলি।আর হবু বৌ না। আমাদের মনের মতে বিয়ে হয়ে গেছে। পাগলি।। বুদ্ধু্............... গুব্লু
- হয়েছে, হয়েছে ... কিছু খেয়েছিস?
- না... ঐ স্পেশাল জিনিসটা খাওয়ার জন্য পার্বতী রাত্রির উপোস করেছি।
- কোন জিনিস??
- ঐ যে তুই যেটা ঠোঁট দিয়ে যেটা দিস...
পিছন ফিরলো রাগিনী, চোখটা বড়বড় করে তারপর ফ্যাক করে হেসে দিলো। পাছে কাকু দেখে ফেলে তাই মুখটা চেপে নিলো, কিন্তু কাঁচের প্রতিচ্ছবিটা তখনো দেখতে পাচ্ছে ইমন। মুখে তারও একটা দুষ্টু হাসি , রাগিণী এসএমএস করলো,
- ইয়ার্কি করিস না।খেয়েছিস??
- হুম কচুরি, তুই?
- হ্যাঁ খেলাম তো, কাকা ভাত খাওয়ালো, তুই আজকে ঠিকঠাক জল খেয়েছিস?? এখনো পর্যন্ত দেখলাম না কিন্তু।
- ওঠার একটু আগেই খেয়েছি।
হঠাত বাসে একজন সুন্দরি মেয়ে উঠলো, তার সৌন্দর্য্য সত্যি প্রশংসনীয়, তো কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল ইমন, রাগিনীর গলা খ্যাঁকরানিতে হুশ ফিরলো ইমনের। ততক্ষনে ইমন বুঝে গেছে যে, কাশ্মীরের যুদ্ধের ঘন্টা বেজে গেছে, ইমন এসএমএস করলো,
- ভালো অনেককেই লাগে, ভালো সবাইকে বাসা যায় না
কোনো উত্তর এলো না, ইমন আবার লিখল,
- সরি সোনা, I Love You
কোন উত্তর এলো না, কিন্তু এরপর একটা ছোট্ট ঘটনা বরফ গলালো। রাগিনীর কাকু মেয়েটাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে উঠে নিজের সিটটা ছেড়ে দিলেন। অথচ, এই কাকাই একটু আগে একজন বয়স্ক মহিলা দাড়িয়ে থাকলেও তিনি উঠে দাঁড়ান নি, ঐ যে একটা কথা আছে না “Girls Will Be Women But Men Will Be Men ”. এ ঘটনাতে রাগিনীও বেশ কিছুটা হতবাক। সঙ্গে সঙ্গে ইমনের এসএমএস,
- Men Will Be Men. Even if It’s Your Kaku.
রাগিনী উত্তর দিলো,
- সব পুরুষই সমান,
- তাই জন্যই বলছি অতো খুঁজিস না, আমাকেই বিয়ে করিস।
- Just Shut Uppppp! বুড়োর না হয় ভীমরতিতে পড়েছে তুই এটা কি করে করলি??
- You Know I am a Sagittarian. Exploring is in my blood.
- Then I am A Libra, A Blood Sucker To You…
- I Love A Vampire, ভালো ভালো...
Astrology বলে যে, এই পৃথিবীর সবচেয়ে মজবুত bonding হচ্ছে Sagittarian আর Libra এর. তারা মারপিঠ করবে, ভালোবাসবে, ব্লক আনব্লক করবে, অভিমান করবে , Pillow Fight করবে, কিন্তু দিনের শেষে তারা একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারবে না। অনেকটা Tom & Jerry এর ৭০ বছরের বন্ধুত্বের মতো।
এরই মধ্যে , আমার পাশের লোকটি নেমে যেতেই রাগিনীর কাকা আমার পাশে এসে বসলো, ইমন মেসেজ করলো,
- যেখানে বাঘের ভয়। সেখানে টিউবলাইট জ্বালাতে হয়।
রাগিনী উত্তর দিলো,
- হাহাহা...
আচমকাই রাগিনীর কাকা বলে উঠলো,
- ভাই এই ফোন ব্যাবহার করে কি পাস। এই বয়েসে প্রেম প্রেম। সামনে তো দিন পরেই আছে। আমার ভাইঝিটাকে সেই ভয়ে দিয়ে আসি , নিয়ে আসি ।
ইমন কৌতুকের স্বরে বলল,
- কি বলছেন কাকু ?? আমার ফেসবুক “স্ট্যাটাস সিঙ্গেল”। আর কোনটা আপনার ভাইঝি?
- ঐ যে তোমার সামনে...
- ও আচ্ছা, ...
রাগিনী সামান্য একটু হাসলো... কিন্তু মনে মনে কাকাকে গালি দিলো। মায়ের কাছে মাসির গল্প করছে... হুহ... ওর কাকা বলল,
- আমাদের মেয়েকে আমরা সেইভাবে মানুষ করেছি। যে প্রেম ট্রেম বোঝে না...
সঙ্গে সঙ্গে ইমনের এসএমএস,
- হ্যা সেই , কিছু বোঝে না... ঝোপে পেলে ভালোবাসার কোপ দিতেও ছাড়ে না... আমার জামা টেনে ছিঁড়ে দেওয়ার কেসটা বলব?? এখনো ঘাড়ে Love Bites এর দাগটা আছে... দেখাই।
রাগিনী সামান্য ইতঃস্তত হয়ে লিখলো,
- একদম না। আমি ভালো মেয়ে। ওনাদের কাছে।
- LOL….!
এর মধ্যে কন্ডাক্টার বলল, “টিকিট...”
ইমন বলল,
- বারাসাত একটা...
সঙ্গে সঙ্গে ওর কাকা বলে উঠলো,
- বারাসাতের কোথায় ভাই?
- কেন?
- না, আমরাও বারাসাত,
- আমি হ্যালা বটতলায় থাকি,
- ওও... আমরা আবার ডাকবাংলোর কাছে।
ইমন রাগিনীকে এসএমএস করলো,
- এই তোর কাকা এতো উৎসুক কেনো , আমার ব্যাপারে... আরে কয়েকদিন পর তো চিনেই যাবে...
- ওনার সবকিছুতেই বেশি ...
- আচ্ছা আমি ঘুম দিলাম, কাল সারারাত গেজিয়েছি তোর সাথে... ডেকে দিস তো...
সামনে কাঁচে ইশারা করে ও বোঝাতে চাইলো কিভাবে...??
ইমন এসএমএস করলো,
- তোর কাকাকে বলবি বারাসাত এসে গেছে। আমি উঠে যাবো।
- হুম।
বাসের জানলায় মাথা ঠেকিয়ে। ঘুমিয়ে পড়লো ইমন, মোবাইলের বন্ধ স্ক্রীন থেকে রাগিনী তখনো ইমনকে দেখছে।
বারাসাত আসার কিছু আগেই ঘুম ভেঙ্গে গেছে ইমনের। সন্ধ্যে নেমেছে ঘন হয়ে। বাস থেকে নেমে দুজন দুদিকে চলতে শুরু করলো... জানে তারা আলাদা হয়নি শুধু পথটা আলাদা হয়েছে। হঠাত, রাগিনীর ফোনে ইমনের লেখা ম্যাসেজ।
“ যদি কোনোদিন এভাবেই হয়ে জাই আলাদা। আর যদি না হয় দেখা, মনে পরবে কি আমায়? বাসবে কি ভালো তবু?”
অন্ধকার গলি দিয়ে এগিয়ে চলেছে ইমন, বাধা পড়লো এক জোর চিৎকারে...
“ইমনননন...”
পিছন ফেরার সুযোগ পায়নি ইমন তার আগেই... দুটো চড়... রেগে গেছে রাগিনী, দুচোখ বেয়ে জল নামছে তার। চোখ দুটো লাল... অনেকটা কাঁদতে চেয়ে কাঁদতে না পারলে যেমনটা হয়। রাগিনী চেচিয়ে বলল
- তোর সাহস কি করে হল ?? ওটা পাঠানোর, ঝগড়া কর, ফ্লার্ট কর, মার, যা পারিস কর... কিন্তু যাওয়ার কথা বললে হাত পা ভেঙ্গে, ঘরে বসিয়ে রাখব, তোর শরীর খারাপ বলে পূজো দিতে গেছিলাম। আর তুই ছেড়ে যাওয়ার কথা বলছিস...
আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো রাগিনী । সুযোগ দেয়নি ইমন বুকের মাঝে চেপে ধরেছিলো ইমন... বলেছিল
- তোকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছিল... তোর উষ্মতায় আমি বেঁচে থাকার রসদ পাই... ভালোবাসা পাই।
নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়নি রাগিনী... কারন ঐ যে দিনের শেষে যে তাকেই চাই... আর কিছু নয়...
আজ ২১ শে জুন... আমি ২০১৬ সালে এই দিনে প্রথম গল্প লেখা শুরু করি। আজ তাই এ গল্প আমি আমার গল্পদের উৎসর্গ করলাম। আমার গল্প বেঁচে থাকুক পাঠকের চোখে। উষ্ণতার আদরে।
Comments
Post a Comment