|| পরিবর্তন ||
-Dip Saha Chowdhury( #রোদ্দুর )
ধরুন ক্লাসের প্রথম হয় যে মেয়েটি সে ক্লাসের
সবচেয়ে খারাপ রেসাল্ট করা ছেলেটির প্রেমে পড়েছে। বা ধরুন ক্লাসের Hunk ছেলেটি একটি চশমিশ ,
অগোছালো ঝগড়াটে একটি মেয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। একে কি বলবেন? পাগলামি? হুম পাগলামিই
বটে, রবীন্দ্রনাথ এক জায়গায় বলেছিলেন- “ বিয়ে করলে মানুষকে মেনে নিতে হয়, তখন আর গড়ে নেবার ফাঁক
পাওয়া যায় না ”। আজ এই গল্পের সেটাই আসন্ন উপসংহার।
•••••
রজত রাহুল
রায় , বিসনেসম্যান রাহুল রায়ের একমাত্র ছেলে। বাবার বিশাল প্রতিপত্তির
সুবাদে বেপরোয়া জীবনের অধিকারী। বহুবার জেলে গেছে। বেশিরভাগ অবশ্য মদ খেয়ে মানুষ
পিষে দেওয়া, ইভটিসিং ইত্যাদি ইত্যাদি । কিন্তু বাবার গোলাম এই সিস্টেম। তাই কখনো পরোয়া
করেনি রজত। এরকমই এক শীতের সন্ধ্যা মারপিট করে হসপিটালে এসেছে রজত। মাথা ফেটে রক্ত
গড়াচ্ছে। ঢুকেই চেঁচামিচি শুরু করল সাথে গালিগালাজ। হঠাত পেছন থেকে একটি নারীকণ্ঠস্বর ভেসে এলো-
-
কী হয়েছে?
রজত দেখল এক যুবতী নার্সের পোশাক পরে সামনে
দাড়িয়ে আছে। মদের নেশায় সে যেন আরও সুন্দর লাগছে। রজত নেশাময় গলায় বলল
-
কেনো?? দেখতে পাচ্ছিস না??
মাথা ফেটে গেছে,?
-
বসুন, ফার্স্ট-এইড নিয়ে
আসছি...
-
যা যা।। যা পারিস আন
এই বলে নার্সটি ভিতরে চলে গেল।। কিছুক্ষন পর যখন
সে এলো তখন দেখলো রজত ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। ভালো করে ড্রেসিং করে দিলো সে। ড্রেসিংয়ের সময় আবশ্য অনেক গালিগালজ করেছে,
পাত্তা দেয়নি । কারন কর্মই ধর্ম। ড্রেসিং শেষে রজত
২০০০ এর একটা নোট দিয়ে বলল,
-
এই নিন,
-
সেবা বিক্রি হয়না, আর তুই
থেকে আপনি?? কাজ করতে পারলেই আপনারা সম্মান দেন ।। তাই না।
নিজের কাজে লজ্জিত হয়ে, রজত বলল,
-
সরি, ভুল হয়ে গেছে
-
চেষ্টা করবেন পরবর্তীকালে
সম্মান করতে কারন ওটা আপনার সম্পত্তির পাহাড় দিয়ে কিনতে পারবেন না।
কথাটি শুনে মাথা নিচু করে চলে গেল রজত। কিন্তু
সারা রাস্তায় তার কথাগুলোই তাকে তারা করে বেড়িয়েছে। ভাবল পরেরদিন তার
কাছে গিয়ে আরও একবার ক্ষমা চেয়ে নেবে সে...
পরদিন যখন ঘুম ভাঙল তখন ১ টা , অবশ্য এটা তার
কাছে নতুন কিছু নয়, কোনোরকম সেজেগুজে সে হসপিটালে যখন পৌছালো তখন অবশ্য নাইট শিফট
শেষ হয়েছে। দপ্ততরে খোঁজ নিয়ে জানতে
পারলো যে মেয়েটির নাম রুপা সান্যাল।
••••
জীবনের প্রতি মুহূর্তে আমরা এমন কিছু না কিছু
মানুষের সম্মুখীন হই যারা ভালোবাসাকে ঘৃণা করে, কিন্তু একটু খোঁজ নিয়ে দেখুন তারাও
একসময় তুখোর প্রেমিক ছিল।
সন্ধ্যের ভির ঠেলে এক বারের সামনে এসে দাঁড়ালো
বিলাসবহুল গাড়ি, অডি থেকে যে মানুষটি নামলো তাকে শহরতলি রাক্ষস নামে চেনে, অর্থের
মহিমায় শহরতলির ত্রাস সে। রাহুল রয়। কিন্তু আজ গল্পটা অন্যরকম, বারের দিকে এক পা
এগিয়েও পিছিয়ে এলো সে। আবার গাড়িতে উঠে ছুটলো হাসপাতালের দিকে। রিসেপশনে ঢুকেই
প্রশ্ন করলো “নার্স সান্যাল এসেছেন?”। উত্তর এলো হ্যা, সুতরাং সে দেরি না করে
ভিতরে ছুটল। স্টাফ রুমে বসে আছে রুপা।
ভদ্রভাবে রজত বলল –“একটু শুনবেন??”
রুপা কিছুটা রাগ নিয়ে বলল- “কার মাথা ফাটিয়েছেন?
আজ”
-
না না ।। তেমন কিছু না
-
তাহলে?
-
একটু কথা বলা যাবে??
-
ডিউটিতে আছি
-
আচ্ছা নাম্বারটা পাওয়া
যাবে?
-
না, আমি অচেনা কাউকে নাম্বার
দিই না। আর কোনো মাতালকে তো নাই।
-
আজ আমি ড্রিঙ্ক করিনি।
-
নাম্বার দিয়ে কী করবেন??
-
দিন ই না।
-
নিন “৯৮********”
-
আপনার ডিউটি শেষ কখন??
-
৪ টে
-
হুম.........
এই বলে গাড়িতে উঠলো রজত।
ভোর চারটে...
ফোনটা বেজে উঠলো রুপার...
-
হ্যালো
-
ডিউটি শেষ হল আপনার??
-
হ্যা কেন বলুন তো??
-
না মানে সেই থেকে গাড়িতেই
বসে আছি
-
মানে ?? আপনি বাড়ি যাননি ?
-
না
যে মানুষটি আপনাকে দেখার জন্য মুখিয়ে থাকে,
সবসময় আপনার সাথে কথা বলতে চায়। আপনার খেয়াল রাখে তার থেকে ভালো আপনাকে কেউ বাসে
না বিশ্বাস করুন... বাইরে বেড়িয়ে রুপা দেখে একটা সাদা অডির সামনে দাড়িয়ে আছে রজত
মুখে এক চওড়া হাসি। এভাবেই শুরু হয় এক নতুন প্রেমের গল্প
••••••
একমাস পর ......
এক পার্কে বসে আছে দুটো
ছায়ামূর্তি. রজত আর রুপা। এতদিনে অনেক
বদলে গেছে রজত, এখন আর সে বারে যায় না, অডি থেকে ফুটপাথের পায়ে হাটাটাই বেশি পছন্দ
তার, বাবার ব্যাবসার কিছু দায়িত্ব সে নিজে নিয়েও দায়িত্ববান হয়েছে
ভালোবাসায় যে ক্ষমতা আছে
তা বিস্বের কিছুতে নেই। ছাইয়ের মাঝে যখন কোনো সবুজ পাতা জন্ম নেয় তখন সেটা ভালবাসা।
মেঘলা দিনের শেষে যখন রামধনু উঁকি দেয় সেটা ভালোবাসা। ইচ্ছেরা যখন প্রেমপত্রে
কালির ছোঁয়া দেয় তখন ভালোবাসা জন্ম নেয়। রজতের কাঁধে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে রুপা,
রুপার মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার সুযোগটা ছাড়ে নি রজত। যখন রুপার ঘুম ভাঙল রজতের
হাতের ছোঁয়ায় তখন বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছে রুপা রজতের দিকে। তাদের অজান্তেই
তাদের ঠোঁটগুলো একে ওপরকে স্পর্শ করল। এই ঘটনা নতুন নয় রজতের কাছে। কিন্তু এর আগে
সে চুম্বন ছিলো ব্যাবহারের চুম্বন । আজ তা ভালোবাসার চুম্বন। বেঁধে রাখার চুম্বন..
পরেরদিন দুপুরেই অফিস
থেকে বেড়িয়ে পি সি জুয়েলার্সে ঢুকল রজত। নিজের পছন্দ মতে একটা এনগেজমেন্ট রিং
কিনলো সে। আজ সারপ্রাইজ দেবে সে। বিকালে পার্কে রুপাকে প্রোপোজ করতে গিয়ে রজত
বুঝতেও পারেনি আসল সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছিল । রুপা তাকে প্রত্যাখ্যান করে। রুপা
ছলছল চোখে বলে –
“ আজ থেকে প্রায় চার বছর
আগে আমি আর আমার বাবা রাস্তা পার হচ্ছিলাম। হঠাত একটি গাড়ি আমার বাবাকে ধাক্কা দেয়
শুধু তাই নয় বুক বরাবর গাড়ির চাকা চলে যায়... মরমর করে ভেঙেছিল সেদিন আমার বাবার
বুকের পাঁজর... তুমি সেদিন গাড়ি চালাচ্ছিলে... সহানুভুতির খাতিরেও সেদিন তুমি আমার
আর্তনাদে থামাও নি তোমার গাড়ি... আমার মা এই খবরে প্রান হারান... সেদিন একইসাথে
দুজনের চিতা জ্বলেছিল... সে আগুন আজও আমায় ঘুমাতে দেয় নি... পলিশের কাছে বারবার
গিয়েও কোন ফল হয়নি... কারন তোমার বাবা তাদের কিনে রেখে ছিলেন”
এসব শুনে আকাশ ভেঙে পরে
রজতের মাথায় ।। পায়ের নিচের জমি সরে যায়। বুকে কিছুটা জোর নিয়ে রজত বলল
-
আমি তো বদলে গেছি
-
আমি তোমায় বদলাতে
পেড়েছি আমি জানি,
-
আমায় কি মেনে
নেওয়া যায় না?
-
তোমার চাইতে আমি
তোমাকেও বেশি ভালোবাসি... পাগলের চাইতেও বেশি।। কিন্তু... স্মৃতিগুলি কি করে মেনে
নেব?
উত্তর নেই রজতের কাছে...
ফিরে চলে রুপা... পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে রজত... রুপার কাঁধ রজতের চোখের সাগরে ভিজছে ...
রজত বলল-
-
বিয়ের পর আমায় বদলে দিয়ো
বাকি যা আছে...
-
বিয়ের পর মেনে নিতে হয় ...
বদলানো যায় না... একটা কথা দেবে??
-
হুম ...
-
আবার বদলে যেয় না।। খারাপ
হয়ে যেও না... এই কথা রাখার মধ্যে বেছে থাকব আমি।। আমার ভালোবাসা।। কোনদিনও খুঁজতে
যেও না আমায়।
এই বলে রজতের
হাত ছাড়িয়ে ছুটে পালায় রুপা... চুলগুলো তখন হাওয়ায় উড়ছে...
দুবছর পর...
রজতের ঘড়িতে তখন সকালের #রোদ্দুর পড়েছে... অফিসের
জন্য বেড়িয়ে পড়েছে রজত... পরিবর্তনকে মেনেছে সে পরিবর্তনের জন্য... খবরের কাগজের
পাতাতে একটা খবর বেড়িয়েছে “Entrepreneur
of the Year – Rajat Rahul Roy ”
Comments
Post a Comment