।। তারাদের কথা ।। - সেই ছেলেটা ( Dip Saha Chowdhury )

- না । আসলেই পারতি...
আজ মোহনের সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবীর বিয়ে ও না আসলে পারে??? কিন্তু কয়েক বছর আগেও ব্যাপারটা একটু আলাদা ছিলো। মোহন খুব ভালোবাসতো রাইকে কিন্তু এখন গল্পটা অন্য । এখন রাইয়ের বিয়েতে সবচেয়ে খুশি । এরকম পরিবরতনের কারণ কেঊই আন্দাজ করতে পারেনি । সময়ের বোঝায় হয়তো কারণ খোঁজার গুরুত্বটাও লোপ পেয়েছে । তাই কেঊ আর সময়ের পাতা উল্টানোর চেষ্টাও করেনি। মনিষের প্রশ্নে মোহন উত্তর দিলো
- আরে আমি না এলে বিয়েটা কি করে হবে ? আজকেই তো ওর পিছনে লাগার শেষদিন... আরে আসলে অফিসে খুব চাপ ছিল ... এই আমার ট্যাবটা রাখ তোর দায়িত্বে।
এই বলে মোহন ট্যাব ব্যাগটা মনিষের হাতে ধরিয়ে দিলো। মনিষ বলল
- কাজ কাজ কাজ...। আর কতো করবি?? এরপর তো বিয়েটা অফিসেই করবি...
মোহন একটু হেসে বলল
- হ্যাঁ। এবার ভাবছি । ছুটি নেবো ... আর অফিসে বিয়ের আইডিয়াটা খারাপ না ... হা হা...
এই বলে দুজনে বিয়ে বাড়িতে ঢুকলো। ঢুকেই রাইয়ের মাকে দেখে বলল
- কাকিমা ... বিয়েটা মনে হচ্ছে আপনারই হচ্ছে। হেব্বি লাগছে কিন্তু।
কাকিমা হেসে বললেন
- হ্যাঁ ... সেই... যা ওদের সাথে কথা বল
মোহন আর দেরি করল না... সোজা বিয়ের জায়গায় হাজির... মনিষকে বলল
- ওর বর কি করে রে??
- TCS এর ম্যানেজার
- ম্যানেজার...? এরপর তো ওকে ম্যানেজ করতে করতে গল্প সাড়া ...! দাঁড়া রাইয়ের পিছনে লেগে আসি...
এই বলে ও রাইয়ের পিছনে গিয়ে বসল... এই দেখে রাই ভাবল ওইটা আবার এদিক আসে কেন???????
পিছনে পিয়াকে বলল
- সর... পার্সোনাল মিটিং আছে...
পিয়া বলল
- আমিও শুনি...
- শোন... আর কি করবি... রাই আজকে একটা গান শুনছিলাম "শোলার টোপর লোহার হবে এবার..."
রাই মুখ ভেংচিয়ে বলল
- ওই গান এখনো লেখা হয়নি।।
- লেখা হবে ... বৌভাতের পর ।।
- এই তুই যাবি??? না যজ্ঞয়ের কাঠ নিয়ে তাড়া করবো??
- যাচ্ছি... শালা তোর শ্বশুর বাড়িতে আগুন জ্বালাতে গ্যাস লাগবেনা... এরকম কাঠ নিয়ে তাড়া করিস!!!
- তুই যাবি???
- আচ্ছা...
হাসতে হাসতে উঠে পড়ল...।
ঐদিকে মনিষের কাছে থাকা মোহনের ট্যাব ব্যাগটা কেঁপে উঠল... ম্যাসেজ...
মনিষ না জানিয়েই খুলে ফেলল ম্যাসেজটা, নাম দেখাচ্ছে ডঃ স্বাতী ম্যাসেজটা লেখা
"ওষুধটা খেয়ে নিয়ো..."
মনিষ ভাবল ও এই ব্যাপার ... নতুন কাউকে পেয়ে প্রাক্তনের বিয়েতে আনন্দ... বিশাল ব্যাপার.
ট্যাবটা ঢুকাতে গিয়ে হঠাত চোখ পড়লো একটা রিপোর্টে... কোন টেস্টের ... রিপোর্টের খামটা খুলে যা দেখল তাতে আকাশটা ঠিক তার মাথার উপরই যেনও ভেঙ্গে পড়লো... এতো কোলাহলের মাঝে কেন জানে না তার বুকের স্পন্দন্টাই সে শুনতে পারছে... রিপোর্টটা ছিলো বায়প্সির। ম্যালিগ্নান্সি পজেটিভ... একমুহূর্তের মধ্যে এতদিন পর মোহনকে পাওয়ার আনন্দটা যেন কর্পূরের মতো মিলিয়ে গেলো... ঐদিকে মোহন একগাদা ছেলেমেয়ের মাঝে হাসাহাসি করছে... যেন কিছুই জানেনা ও...
এরপর সবাই মিলে মনিষকে বলল চল খেয়ে নি... আনেক রাত হল... ও সব কিছু গুছিয়ে এগিয়ে চলল... মোহনের সাথে দেখা হতেই ও বলল
- কি মামা... তোমার আবার কি হল??
মনিষ কষ্ট করে হেসে বলল
- তেমন কিছু না... তোকে দেখছি...
- আমাকে?? ভাই তোর সবকিছু ঠিক আছে তো?? I mean are u Straight till now??
এই বলে ও নিজের মনে খাবারের জায়াগার দিকে চলে গেল... খাওয়ার টেবিলে মনিষ আর ওর পাশে বসল না... সাহস নেই তার বাস্তবকে মেনে নেওয়ার।। মেনে নেওয়ার যে মোহন আর কয়েকদিনের অতিথি মাত্র । ওপাশের টেবিল থেকে মনিষের চোখে চোখ পরতেই মোহন ইশারায় বলল কি হয়েছে? মনিষ না সূচক একটা ঘাড় নাড়াল।
...... রাস্তায় নেমে এসেছে ওরা ... মনিষকে মোহন বলল
- দে বাগটা দে... আজ অনেক খেলাম... হাঁটার ক্ষমতা নেই রে... বিরিয়ানিটা খুব ভাল হয়েছে... আরে তুই কিছু বল?? যাই বলিস রাইয়ের বরটা হেব্বি... হবে না কেন লোক চড়িয়ে খায়...
- রোগের কথাটা লুকিয়ে গেলি কেন??
এরকম একটা কথা শুনে কোন কাল নীরবতা নেমে এল... কিন্তু মোহন সেই হাসি নিয়ে বলল
- তো রহস্য উন্মচিত হয়ে গেছে... তো মিঃ হোমস ... অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড শোনান হল??
- তুই এটা কেন করলি??
- আমি কি করলাম?? আরে আমি কয়েকদিন ঘুরতে এসেছিলাম এই পৃথিবীতে । কয়েকদিন পর মহাকাশযানে চড়ে আবার মহাশুন্যে পাড়ি দেব...!
মনিষের চোখে জল দেখে মোহন আবার হেসে বলল
- আরে আমাকে মিস করলে ওই আকাশে ধ্রুব তারার পাশে দেখবি একটা ছোট্ট তারা মিটমিট করছে... ওটাকেই যা অভিযোগ জানাস ... আব্দার করিস... ভালোবাসিস... আমি ঠিক উত্তর দেব...! এবার তো যেতে হবে বস...
এই বলে মোহন হাঁক দিলো... "ট্যাক্সি...... পার্ক স্ট্রিট যাবে??'
- যাব সাব ১০০ টাকা বেশি লাগবে।। রাত হয়ে গেছে সাব।।
- হ্যাঁ দেব... চল... অর্থই অনর্থম...
এই বলে ও ট্যাক্সিতে উঠে পড়লো... আর ট্যাক্সির জানলা থেকে একটা হাত বেড়িয়ে যেন বলে "ভালো থাকিস..."
সেই সময় মনিষের মনের অবস্থা বর্ণনা করার সাধ্য আমার কলমের নেই... তাই বর্ণনা করতেও পারলাম না...
........................... এক বছর পর এক পার্কের বেঞ্চে বসে আছে মনিষ... ভাবছে আজ এই দিনে যদি মোহন পাশে থাকত তাহলে হয়তো এই বেঞ্চটার দরকার পড়তই না... মনে পরে গেল মোহনের সেই কথাগুলো ... তারার কথা... তারাদের কথা... একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকালো মনিষ... সত্যি ধ্রুবতারার পাশে একটা তারা মিটমিট করছে... যেন বলছে পাশে আছি.....
Comments
Post a Comment