।------------ সম্মতি দিলাম ---------------।

“জীবন আর মৃত্যুর মাঝে রেখাগুলি খুবই অস্পষ্ট । কে জানে কোথায় শুরু কোথায় শেষ??” –এডগার আল্যান পো
শহর কলকাতায় সবে শীতের সন্ধ্যা নেমেছে... তখনও মাঘের শীত আসতে অনেক দেরি। ট্রেন থেকে নেমে। সাইকেলে বাড়ি ফিরছে রাশি। সারাদিন পড়ার ব্যাচেই কেটে গেল। এখন বাড়ি ফেরার পালা। তাছাড়া সকাল থেকে ফোনে চার্জও নেই। বাড়ি থেকে কটা ফোন এসেছে কে জানে? এই ভেবে রাশি বাড়ির দিকে জোরে সাইকেল চালালো। হঠাত সে দেখল রাস্তার এককোণে দাড়িয়ে একটি ছেলে। মুখটা ঠিক বোঝা গেল না। রাশি ততক্ষণে অনেকটা এগিয়ে গেছে হঠাত তার হাতের ঘড়িটার কথা মনে পড়ল। ছেলেটার ডান হাতে ঘড়ি। মডেলটাও চেনা। আরে অটা তো রাকেশ। কিন্তু... এই ভেবে যেই সে পিছনে ফিরেছে সেই দেখল রাকেশ নেই। হয়ত আশেপাশে লুকিয়ে পড়েছে। তাই সে কিছুটা পিছনে ফিরে এলো। কিন্তু আশেপাশে খুঁজেও ওকে পেল না। তাই হতাশ হয়ে ফিরে যেতে গিয়ে দেখল যে যেখানে রাকেশ দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে একটা কাগজ পাথরে চাপা দেওয়া আছে। কাগজটা একটু ভিজে গেছে। কাগজটা তুলে নিয়ে সে দেখল তাতে লেখা “সম্মতি দিলাম”।
রাশির মনে পরে গেল কিছুদিন আগে রাকেশ তাকে বলেছিল সে তাকে ভালোবাসে। কিন্তু সে তাকে কোনমতেই মেনে নিতে রাজি হয়নি। অনেকদিনের টালবাহানার পর “একদিন আমি তোকে মুক্ত হওয়ার জন্য ‘ সম্মতি দেবো’। সেদিনের পর আর জ্বালাবো না।“
রাশি চিঠিটা পেয়ে বুঝল সত্যিই রাকেশ নিশ্চয়ই খুব কষ্ট পেয়েছে। আজ বাড়ি গিয়ে ফোন করে একটু বোঝাতে হবে। আর তাছাড়া অ এরকম লুকিয়েই বা পড়ল কেন। সেতার জন্য বকতে হবে।
বাড়িতে পৌঁছাতেই সে ভেবেছিল যে মায়ের কাছে বকা খেতে হবে। কিন্তু বাড়ি ফিরে যে দৃশ্য সে দেখল তার জন্য সে একদমই প্রস্তুত ছিল না। দেখল তার মায়ের চোখে জল। মা ধরা ধরা গলায় বললঃ
- একটা খুব খারাপ আছে।
রাশি ভয়ার্ত চোখে বলল
- কী?
- আজ দুপুরে পার্কস্ট্রীটের কাছে একটা রাস্তা পার হতে গিয়ে রাকেশ একটা লরির নিচে চাপা পড়েছে। তোর বন্ধুরা তোকে ফোন করেছিল কিন্তু সেটা নাকি বন্ধ ছিল।
এই বলে তার মা তাকে জড়িয়ে ধরল । রাশি তার মাকে ছাড়িয়ে সোজা তার ঘরের দিকে পা বাড়াল । তার আর কিছু শোনার নেই। তার মনে একটাই কথা আসলো। যদি আজ এই মুহূর্তে স্বপ্নটা ভেঙ্গে যায়? তাহলে হয়ত সে ছুটে গিয়ে বলতে পারতো “তুই একটু অপেক্ষা করতে পারলি না??’। হয়ত দু-এক থাপ্পড়অ মেরে দিত। কিন্তু... তার অজান্তেই চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ল। হঠাত সে শুনতে পেল তার ল্যাপটপে একটা নোটিফিকেশন এলো, একটা পোস্টে সবাইকে ট্যাগ করা হয়েছে- “ RIP Rakesh. We will miss you!!” রাশির অজান্তে তার হাতেই মাউস ক্লিক করল রাকেশের প্রোফাইলে । তাতে শেষ পোস্ট ছিল। “Which Prayer Would You Like to do in my funeral?? ” অর্থাৎ আমার শেষ যাত্রায় তোমার প্রার্থনা কী হবে??
রাশি তাতে লিখে দিল – “তুই ফিরে আয়... আর কোনদিন রাগ করব না”
হঠাৎ দরজার বাইরে থেকে কেউ বলল
- আর সম্ভব না।
রাশি বাইরে এসে দেখল রাকেশ বাইরে দাঁড়িয়ে হাসছে। আর চোখে জল, এই জল ভিজেছিল সেই চিঠি। সে কিছু বলার আগেই সে উলট দিকে হাটতে শুরু করলও। এবং কিছু পরে মিলিয়ে গেল । তখনও রাশির পায়ের কাছে পরে আছে লাল গোলাপটা। রাকেশ সত্যিই রাশির পছন্দটা জানে। সেই গোলাপটা হাতে ধরে কাঁদতে শুরু করল। সত্যি কী রাশি রাকেশ কে ভালবেসেছিল?? তার উত্তর তার কান্নারাও জানে না।
ডারউইন বলেছিলেন- “পরিবর্তিত পরিবেশে যে জীব নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে না তারা একদিন পৃথিবী থেকে একদিন লুপ্ত হয়ে যায়”।
হয়ত রাকেশ সেই সূত্রেরই শিকার। তাই তাকেও আজ লুপ্ত হতে হল জীবনের নয় প্রেমের নিয়মে

Comments

Popular posts from this blog

ফিউসবক্স (Sequel of কলেজস্ট্রিট)

“ওম”

♥ ♥ ব্যারিকেড ♥ ♥